প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনিষ্পন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা অর্জন করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

রোববার (৪ সেপ্টম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক গভীরতর হওয়াসহ সার্বিকভাবে এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই সফর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ও বিদ্যমান গতিশীল সম্পর্ককে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা যায়।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ভালো। একটা আদর্শ সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রীর সফরের ফলে আমাদের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কটা আরও উন্নত হবে বলে আমার বিশ্বাস। এ সফর আশা করি অত্যন্ত সফল হবে। আমরা মোটামুটি সাতটা এমওইউ সই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। 

মোমেন বলেন, চলমান কোভিড মহামারি, ইউক্রেন সংকট এবং বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে এই সফর দু’দেশের পারস্পরিক সমঝোতা ও সাহায্যের মাধ্যমে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম/নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছি।

সফরে আলোচনার প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ভারতের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দ্রাবাদ হাউজে অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ প্রভৃতি অধিক গুরুত্ব পাবে।

মোমেন বলেন, বৈঠক শেষে বেশ কয়েকটি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব চুক্তি/সমঝোতা স্মারক পানি ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রেলওয়ে, আইন, তথ্য ও সম্প্রচার, প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত।

দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত আলোচনা হবে কি না-জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী একান্তে আলোচনা করবেন। তবে সেখানে কি আলোচনা হবে সেটা আমরা জানি না।

নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আরও অনেক দিন বাকি। সুতরাং এটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন অন্য কোনো দেশের সঙ্গে আলোচনার কোনো বিষয়বস্তু নয়।

কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) চুক্তির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেপা বিশদ একটা বিষয়। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে যা থাকছে

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি পৌঁছালে বিমানবন্দরে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করবেন। পরদিন ভারতের রাষ্ট্রপতির ভবনে গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা শুরু হবে। একইদিন রাজঘাট গান্ধী সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা অর্পণ করার পর দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দ্রাবাদ হাউজে।

সফরে শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপ-রাষ্ট্রপতি জগদ্বীপ ধনকার এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

সফরে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনাসদস্য শহীদ হয়েছেন বা আহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্টুডেন্ট স্কলারশিপ’ প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী।  

পরদিন ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি বিজনেস ইভেন্টে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এ সফরে প্রধানমন্ত্রীর আজমির শরীফ জিয়ারতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আগামী ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর আগে সবশেষ ২০১৯ সালে ভারত সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় তিন বছর পর আবার দেশটি সফরে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

এনআই/জেডএস