ফাইল ছবি

# তালিকায় অগ্রাধিকার বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল-যুবদল-শিবির
# থানা-ওয়ার্ড-পাড়া-মহল্লাভিত্তিক তালিকা
# মোবাইল নম্বর, ইমেইল ঠিকানা, ফেসবুক একটিভিটি
# কার নামে কত মামলা
# উসকানি আসে এমন মসজিদের তালিকা

রাজধানী ঢাকার পাড়া-মহল্লায় বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কোন নেতা-কর্মী কোথায় থাকেন, কার কী পদবি ইত্যাদি তথ্য নিয়ে বিশেষ তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। একইসঙ্গে বিরোধীদের নামে মামলা দেওয়ার ক্ষেত্রে আসামির তালিকায় যেন মৃত ব্যক্তির নাম না থাকে সে বিষয়ে মাঠ পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের বেশ কয়েকটি জোন ও থানা সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের শেষ সপ্তাহে মাঠ পুলিশের কাছে এ ধরনের একটি নির্দেশনা এসেছে ডিএমপির উচ্চ পর্যায় থেকে। 

পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা বলছেন, সামনে সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে নাশকতা, আগুন সন্ত্রাস, ভাঙচুর, জনজীবন বিপর্যস্ত করার চেষ্টা হতে পারে। সেটা যেন না হয় এবং ঘটলে যেন দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেজন্য তালিকা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ঢাকার পাড়া-মহল্লায় বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কোন নেতা-কর্মী কোথায় থাকেন, কার কী পদবি, কমিটির বিস্তারিত তথ্য, মোবাইল নম্বর, ইমেইল ঠিকানা, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিটি, কার বিরুদ্ধে কত মামলা, কে জামিনে আছেন আর কে পলাতক- সব তথ্য হালনাগাদ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ওই নির্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা বলছেন, সামনে সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে নাশকতা, আগুন সন্ত্রাস, ভাঙচুর, জনজীবন বিপর্যস্ত করার চেষ্টা হতে পারে। সেটা যেন না হয় এবং ঘটলে যেন দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেজন্য তালিকা করা হচ্ছে।

মাঠ পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জসহ দেশের বেশ কিছু জায়গায় মারমুখি অবস্থান নিয়েছে বিএনপিসহ কয়েকটি বিরোধী দল। আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। তাই নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ঢাকার বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিস্তারিত তথ্যসহ তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে।

বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক আন্দোলন ও মাঠের রাজনীতি যেন কোনোভাবে চাঙা না হয়, সেজন্য বিরোধী মতকে দমন করতেই নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের তালিকা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন নির্দেশনার তথ্য আমি পাইনি। এগুলো খুব সেনসিটিভ ইস্যু। এ ব্যাপারে কথা বলতে চাই না।

তবে ডিএমপি’র মিরপুর ও মতিঝিল বিভাগে কর্মরত একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের থানা, ওয়ার্ড ও মহানগর পর্যায়ের কমিটির সদস্য এবং পাড়া-মহল্লা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তালিকা করা হচ্ছে। বড় দল হিসেবে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীদের নাম, পদ-পদবি, মোবাইল নাম্বারসহ বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত তালিকা তৈরিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আগাম তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) কে এম হাফিজ আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোন থানায় বা পাড়া মহল্লায় কারা বসবাস করেন, সেটা রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, তাদের হালনাগাদ তথ্য নিয়ে তালিকা করতে বলা হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দলের নতুন নতুন কমিটি হচ্ছে। সেসব থানা পুলিশের অবগত থাকা দরকার। এটা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রুটিন ওয়ার্ক।

তিনি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির সদস্যদের পদ-পদবি, নাম ও মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহে রাখতে হবে। কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটলে যাতে সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এ ছাড়া যেসব মসজিদ থেকে রাজনৈতিক ও উসকানিমূলক মিছিল বের হয়, সেসব মসজিদের তালিকা করতে হবে। এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নাশকতার নামে বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মামলার ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তি ও বিদেশে থাকা ব্যক্তির নাম থাকা নিয়ে অতীতে সমালোচনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মামলার ক্ষেত্রে আসামির অবস্থান নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের ভুল হয়ে থাকে। নতুন মামলায় এমন ভুল যেন না হয় সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার আন্দোলনকে ভয় পায়। দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে সরকারের পক্ষে এই তালিকা তৈরির কাজটি করছে পুলিশ। যাতে গণআন্দোলন গড়ে না ওঠে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতোমধ্যে মিছিলে গুলিবর্ষণ করে সার্বিকভাবে দমনপীড়নের পথে হাঁটা শুরু করেছে সরকার। দমনপীড়নকে জোরদার করে সরকার তার ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে চায়। এসবের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট যে, সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। সরকার ভয় পেয়ে গেছে, এখন মানুষকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা রক্ষার চেষ্টা করছে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা এ টি এম মাছুম।

ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, পরমত সহিষ্ণুতা হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। সেজন্যই ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে চায়। বিরোধী মত, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলার নামে দমনপীড়নের মাধ্যমে সরকার যা করছে তা কখনো তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না।

জেইউ/জেএস