সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’ বলছে, তারা যা বলেনি তা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে ‘ছায়ার সাথে যুদ্ধে’র অবতারণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ কথা জানায় তারা। বার্তায় তারা জানায় এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে সুজন। নির্বাচনের বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে এ বছরের মার্চ থেকে সময় চেয়েও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) পক্ষ থেকে সাড়া পায়নি বলে অভিযোগও করেছে সংগঠনটি।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পাঠানো ওই চিঠি এবং নিজেদের বক্তব্য গণমাধ্যমে পাঠায় সুজন।

গত ২৮ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের উপযোগিতা’ বিষয়ক এক আলোচনা সভা করে সুজন। এরপর ২৯ আগস্ট ইভিএম সম্পর্কে সুজন-এর বক্তব্যের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘কারচুপির কথা যিনি বলছেন তাকে প্রমাণ দিতে হবে। উনি যদি প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে ইভিএম বাতিল করে দেবো। এর বাইরে কে কী বলবে, তা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’

সুজন বলছে, যেহেতু ইভিএম ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত নয়, এর সফটওয়ারের সোর্সকোড অন্য কারো কাছে নেই এবং এটি  পে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে, তাই এটি দিয়ে বাইরের কারো পক্ষে কারচুপি করা প্রায় অসম্ভব, যদিও কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের পক্ষে কমিশনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কমিশনের ইন্টারনেটে ম্যালওয়ার ঢুকিয়ে অন্য কম্পিউটার থেকে ইভিএমের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরেই পরিকল্পনা কমিশনে যাচ্ছে ‘ইভিএম প্রকল্প’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন যে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের এবং এ কারণে কমিশন ইভিএম সম্পর্কে রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করেছে।

সিইসি ঠিকই বলেছেন, নির্বাচন কমিশনেরই দায়িত্ব জনগণের পক্ষে ও স্বার্থে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। আর এ কারণেই কমিশনকে সাংবিধানিকভাবে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে কমিশনকে অগাধ ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে এবং কমিশনারদেরকে অপসারণের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের বিচারকদের মত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তাই ইভিএম ব্যবহার করে প্রশ্নাতীতভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যাবে তা জনগণের সামনে প্রমাণ করার দায়িত্ব ‘বার্ডেন অব প্রুফ’ কমিশনের, অন্য কারো নয়। আমরা কমিশনকে উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর এ অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার বিনীত অনুরোধ করছি এবং ইভিএম যে সন্দেহাতীতভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উপযোগী সে বিষয়ে জনগণের আস্থা অর্জনের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।

নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আজ একটি চিঠিও দিয়েছে সুজন। সেখানে বলা হয়েছে—

গত ২৮ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমের দুর্বলতার বিষয় জনগণের সামনে সুজন-এর পক্ষ থেকে আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। এ বিষয়ে অতীতেও আমাদের আশঙ্কার কথা একাধিকবার বক্তব্যের মাধ্যমে ও লিখিতভাবে তুলে ধরেছি, যা সম্পর্কে আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে কোনোরূপ সাড়া পাইনি।

তবে আমাদের সাম্প্রতিক সংবাদ ব্রিফিংয়ের পর আপনার একজন সহকর্মী আমাদেরকে ইভিএম ব্যবহার করে যে কারচুপি করা যায় তা প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। আপনার আরেকজন সহকর্মী আমাদেরকে কমিশনে এসে প্রমাণ উপস্থাপন করতে আহ্বান জানিয়েছেন। মাননীয় কমিশনারদের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই যে, বর্তমান ইভিএম দিয়ে যে প্রশ্নাতীতভাবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে তা প্রমাণের দায়িত্ব ‘বার্ডেন অব প্রুফ’ কমিশনের, অন্য কারো নয়। আর যেহেতু অন্য কারো কাছে ইভিএম এবং এর সোর্সকোড নেই, তাই তাদের পক্ষে ইভিএম দিয়ে কারচুপির প্রমাণ উত্থাপন করাও অসম্ভব।

এছাড়া আমরা আমাদের সংবাদ ব্রিফিংয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছি যে, বর্তমান ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, তার অধীনস্থ’ কর্মকর্তা,কারিগরি টিম ও নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের পক্ষে নির্বাচনী ফলাফলকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রভাবিত করা সম্ভব। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন এবং ইভিএমের ওপর আস্থাহীনতাই সর্বাধিক বড় সমস্যা, যা দূর করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব কমিশনের আমাদের নয়। আপনার সহকর্মী আমাদেরকে নির্বাচন কমিশনে এসে আমাদের বক্তব্য উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে আমাদের কোনোরূপ আপত্তি নেই। তবে এটি অপ্রয়োজনীয়, কারণ আমরা সংবাদ মাধ্যমে লিখিতভাবে যা উত্থাপন করেছি।

চিঠিতে আরও বলা হয়, আপনি আরও অবগত আছেন যে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কমিশনের সাথে নির্বাচন বিষয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা শেয়ারের জন্য আমরা অত্যন্ত আগ্রহী। এ মর্মে আমি গত ১৮ মার্চ আপনাকে এক খুদে বার্তায় লিখেছিলাম কিন্তু আজও আমরা কোনো আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাইনি এবং কমিশনের সামনে আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। যদিও ইভিএম আমাদের কাছে নেই এবং এর সোর্স কোড আমাদেরকে দেওয়া হয়নি, যন্ত্রটি নিয়ে বর্তমানে আমাদের আর তেমন কিছু বলার না থাকলেও নির্বাচন বিষয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আমরা কমিশনের সাথে শেয়ার করতে উদগ্রীব। আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।

এসআর/জেএস/এসএসএইচ