দাউদ, যেটাকে মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় Tinea। এই চর্ম রোগটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। আগে দাউদ সহজেই ভালো হয়ে যেত, কিন্তু ইদানিং এটা সহজে ভালো হচ্ছে না। এটার কারণ কী? এর থেকে উত্তরণের উপায় কী? আসুন জেনে নেই এই রোগ সম্পর্কে...

দাউদ একটি ছত্রাক জনিত রোগ। সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের কারণে, অতিরিক্ত ঘামানো শরীরে, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে এবং অতিমাত্রায় স্টেরয়েড বা এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনে এই রোগটি বেশি হয়। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগও।

দাউদ শরীরের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে এবং স্থান ভেদে দাউদ এর নাম গুলোও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন, দাউদ :

#মাথায় হলে Tinea capitis,
#মুখে হলে Tinea faciei,
#দাঁড়িতে হলে Tinea Barbae,
#শরীরে হলে Tinea corporis,
#রানের চিপায় হলে Tinea cruris,
#হাতে হলে Tinea manuum,
#পায়ে হলে Tinea pedis,
#নখে হলে Tinea unguium.

যেহেতু দাউদ একটি ছত্রাক জনিত রোগ বা Fungal Disease। তাই এর চিকিৎসার প্রধান ওষুধ হচ্ছে Antifungal Drug বা ছত্রাক নাশক ওষুধ। স্টেরয়েড বা এন্টিবায়োটিক এই রোগের মূল শত্রু।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে ইদানিং রোগীরা দাউদের চিকিৎসায় পিওর ছত্রাকনাশক ওষুধ বা anti fungal drug ব্যবহার না করে স্টেরয়েড মিক্সড ওষুধ ব্যবহার করছে। যেমন, Pevisone cream,Dermomix cream, Dermovate cream ইত্যাদি।

এই মলমগুলো ছত্রাকনাশক ওষুধের সঙ্গে স্টেরয়েড এবং এন্টিবায়োটিক ওষুধ মিক্সড করে তৈরি করা। এই মলমগুলো ছাড়াও রোগীরা মুখে খাওয়ার স্টেরয়েড ট্যাবলেটও যাচ্ছেতাই ভাবে খাচ্ছে।

এতে রোগীর দাউদ প্রথম দিকে কমলেও পরে ওষুধ প্রয়োগ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি পরিমাণে শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। তখন এটাকে আমরা মেডিকেলের ভাষায় বলি Tinea Incognitio। এটাই দাউদ ভালো না হওয়ার অন্যতম কারণ।

এছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে যেমন,
#ওষুধ সঠিক ডোজ বা মাত্রায় প্রয়োগ না করা,
#নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী ওষুধ না খাওয়া।
#যাচ্ছেতাই ভাবে, ভুল নিয়মে ওষুধ প্রয়োগের কারণে অনেক ছত্রাক নাশক ওষুধ অকার্যকর বা Registrant হয়ে যাওয়া। 

আর এই ভুলগুলো হচ্ছে কোনো এমবিবিএস বা চর্ম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না দেখিয়ে ফার্মেসি থেকে ওষুধ সেবন ও ব্যবহার করার কারণে।

অধিকাংশ মানুষ মনে করে সামান্য দাউদের জন্য ডাক্তার দেখানোর কী প্রয়োজন! আগে ফার্মেসি থেকে ওষুধ খেয়ে নেই, তারপর ভালো না হলে ডাক্তারের কাছে যাবো। এটা একটা প্রচলিত ভুল ধারণা। যার কারণে দাউদ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে, লিভার ডিজিজ সহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দিচ্ছে। 

এর থেকে উত্তরণের উপায় কী? 
দাউদ সামান্য দেখা দিলেও ফার্মেসি থেকে ওষুধ না নিয়ে অবশ্যই একজন এমবিবিএস বা চর্ম বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো। ডাক্তারের দেওয়া ওষুধের পূর্ণাঙ্গ কোর্স কমপ্লিট করা। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ছত্রাক নাশক ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই লিভার ফাংশন পরীক্ষাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় চেক আপ করে নেওয়া। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ পরিহার করা। শরীর ঘামানোর পর দ্রুত মুছে ফেলা। আন্ডার গার্মেন্টস সহ অন্যান্য কাপড় একবারের বেশি গায়ে না দেওয়া। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। ভালো না হলে ডাক্তারের কাছে পুনরায় যাওয়া। রাস্তার পাশে মাইক বাজিয়ে বিক্রি করা পাগলা মলম, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিভিন্ন ধরনের তথাকথিত দাউদের মলম ব্যবহার না করা।

অধিকাংশ দাউদের রোগীর ক্ষেত্রে মলমের পাশাপাশি মুখে খাওয়ার এন্টিফাংগাল ওষুধ প্রয়োজন হয়। এবং সেগুলো একটি নির্দিষ্ট কোর্স পূর্ণ করতে হয়।এই মুখে খাওয়ার এন্টিফাংগাল ওষুধ অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে খেতে হবে। ডাক্তার দেখাতে বিলম্ব হলে অথবা একেবারে নিরুপায় হলে, Terbinafin cream অথবা Clotrimazole cream অথবা Luliconazole cream, এর যেকোনো একটি মলম লাগানো শুরু করুন এবং খুব দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

ডা. মঞ্জুর আহমেদ সাকি (এমবিবিএস)