ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে প্রতিদিন ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্য হচ্ছে বলে দাবি করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি বলছে, প্রতিবাদ করলে হেনস্তা, অপমান ও হত্যার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত 'অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ চাই' শীর্ষক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানান সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। 

তিনি বলেন, গত ১ বছরে দুইবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয় গণপরিবহন ভাড়া। এতে অস্থির হয়ে ওঠে গণপরিবহন খাত। বর্তমানে নগরীর কোনো পরিবহনে সরকার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর নেই। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। এই সময়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করায় তর্কের জেরে গণপরিবহগুলোতে ২৫টি যাত্রী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। এতে বাস থেকে ফেলে ১৪ যাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ১০ জন যাত্রী। যা গণপরিবহন ব্যবহারে যাত্রী সাধারণের মধ্যে ভীতি সঞ্চার তৈরি করেছে। 

তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ করে।

তাদের পর্যবেক্ষণ ও জাইকার সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। গত এক বছরে দুই দফা জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পরে গণপরিবহনে অস্বাভাবিক হারে ভাড়া নৈরাজ্য শুরু হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও এই ভাড়া নৈরাজ্য থামাতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। কোনো কোনো পরিবহনে দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন যানবাহনের চালক, সহকারী ও ভাড়া আদায়কারীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে উল্লেখ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসিচব বলেন, মালিকের দৈনিক জমা, জ্বালানির উচ্চ মূল্য, সড়কে চাঁদাবাজি, গাড়ির মেরামত খরচ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে তারা এ ধরনের ভাড়া নৈরাজ্য চালাতে বাধ্য হচ্ছে।  

তিনি বলেন, রাজধানীতে ১৫ হাজার বৈধ অটোরিকশার পাশাপাশি আরো ১৫ হাজার ঢাকা ও আশেপাশের জেলায় অবৈধভাবে চলাচল করে। ৩০ হাজার অটোরিকশা দৈনিক গড়ে ১২ ট্রিপ হিসেবে ৩ লাখ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করে। এসব অটোরিকশায় প্রতিট্রিপে গড়ে ১৪৫ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় হয়। এতে দৈনিক ৩ লাখ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রীকে অটোরিকশা খাতে কেবল বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।

তিনি আরও বলেন, হিউম্যান হলারের ভাড়া নির্ধারণের আইন থাকলেও সরকার ভাড়া নির্ধারণ না করায় এখানে বরাবরই দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়তি ভাড়ায় যাতায়াত করতে হচ্ছে নিন্মআয়ের যাত্রীদের কাছ থেকে। ১২ হাজার বৈধ হিউম্যান হলারের পাশাপাশি মেয়াদ উত্তীর্ণ, লক্কড়-ঝক্কড়, স্থানীয় গ্যারেজে তৈরি আরো প্রায় ১৮ হাজার হিউম্যান হলারসহ ৪০ হাজার হিউম্যান হলার রাজধানীতে দৈনিক গড়ে ৮০ লাখ ট্রিপ যাত্রী বহন করে। প্রতিট্রিপে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৮ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতে বাধ্য করা হয়। এতে ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা কেবল হিউম্যান হলারের যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

৫ লাখ রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ট্যাক্সি ক্যাবে দৈনিক গড়ে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব যানবাহনে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৭৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এতে গড়ে ১৬২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ ধরনের ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতা বেড়েছে, পণ্যমূল্য বেড়েছে, সামাজিক অপরাধ বাড়ছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন, মানবাধিকার সংগঠক হানিফ ইসা, আতিকুর রহমান প্রমুখ।

আইবি/জেডএস