জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বেকারত্ব-দারিদ্র্যতা বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা হ্রাস, সামাজিক অবক্ষয়, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম ও মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি করেছেন পরিবেশবিদরা। এই জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করছে বলেও মতামত দিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরিড) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বক্তারা এমন কথা বলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর আলোচনায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, প্রকৃতি নির্ভর ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে ব্যবহার না হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এই অধিকার যাদের লঙ্ঘন হচ্ছে তাদের কথাগুলো নীতি নির্ধারকদের কাছে পৌঁছায় না। আমাদের দেশ পানি দুষ্প্রাপ্যের দেশ। শুকনো মৌসুমে মাত্র ২০ ভাগ পানি আসে। 

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে যাদের অবদান বেশি তাদের সমস্যা সমাধানে বেশি এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। পির্তৃভূমি রক্ষা করা মানুষের মানবাধিকার। কিন্তু এটি রক্ষা করা হচ্ছে না।

বক্তারা বলেন, দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা না থাকা ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ পর্যন্ত উন্নয়ন না পৌঁছায় এই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও বেশি ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। এই পরিবর্তনের কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ও জীবিকার পরিবর্তন আসছে। দুর্যোগে অধিকমাত্রায় বেশি বঞ্চনার শিকার হন নারীরা। দুর্যোগকালে নারীদের প্রাত্যহিক কাজের পাশাপাশি স্বামীর বাইরের কাজেও সহায়তা করতে হয়।

বক্তারা বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গবেষণা ফলাফলগুলো বাংলাদেশে সফররত ইউএনএইচসিআর -এর জলবায়ু ও মানবাধিকার দূত ড. ইয়ান ফ্রাইকে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের আহ্বান জানান। 

বাংলাদেশে ৩টি অঞ্চল মোংলা, রাজশাহী ও শরীয়তপুরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা হয়। গবেষণা ফলাফলে গবেষকরা জানান। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত ২০ বছরে এই অঞ্চলগুলোতে যে প্রভাব পড়েছে সে বিষয়টি তারা গবেষণায় তুলে ধরেছেন।

গবেষণায় দেখা যায়, আকস্মিক দুর্যোগ, লবণাক্ততার কারণে এসব অঞ্চলের ২০০ টি পরিবার ৯ কোটি ২৪ লাখ ৯৮ হাজার প্রত্যক্ষ আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এছাড়া তারা স্বাস্থ্য সংকট, বাস্তুচ্যুতি, সামাজিক ও যৌন হয়রানি, পানিসংকট, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, শিশু শ্রম, বাল্যবিবাহ, সহিংসতা, মানসিক বিপর্যয়, ক্যান্সার সহ নানা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিপিআরডির নির্বাহী প্রধান শামসুদ্দোহা, বাদাবন সংঘের নির্বাহী প্রধান লিপি রহমান, এসডিএস  নির্বাহী প্রধান রাবেয়া বেগম, পরিবেশকর্মী আল ইমরান প্রমুখ।

আইবি/এসএম