বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মোট ১৩১.৫৭ কিলোমিটার পাইপলাইন ভারত সরকারেরর অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ অংশের ১২৬.৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে ১২৫ কিলোমিটার পাইপালাইন স্থাপন শেষ হয়েছে।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গত ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। সফরে দুই দেশের মধ্যে ৭টি এমওইউ বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সম্ভাব্য জ্বালানি সঙ্কটের কথা বিবেচনায় রেখে আমি ভারত সরকারকে বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহের অনুরোধ জানালে তারা আমাদের অনুরোধ বিবেচনা করবেন মর্মে আশ্বাস দিয়েছেন। 

দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজতর করার লক্ষ্যে স্থল শুল্ক স্টেশন/স্থলবন্দরগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিশেষ স্থল শুল্ক স্টেশনগুলোতে বিধিনিষেধ ও অন্যান্য অশুল্ক বাধা অপসারণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। 

বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে ভারত কর্তৃক প্রস্তাবিত দ্বিতীয় গেট নির্মাণের কাজ যথাসম্ভব দ্রুত শেষ করার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ হতে একটি প্রতিনিধি দল স্টার্ট মেলায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে শিগগিরই ভারত সফর করবে।

তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে আরও কিছু সমঝোতা স্মারক আলোচনাধীন রয়েছে যা শিগগিরই শেষ হবে বলে আমরা আশা করি। এসব সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষর হলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ অর্জনের পথে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি। 

এসময় প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে চলমান কয়েকটি প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, মৈত্রী পাওয়ার প্লান্ট প্রজেক্টের ইউনিট-১ বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের অংশ হিসেবে রুপসা রেল সেতুর কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। 

পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেললাইন প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। 

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে তথ্য তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাইপলাইন নির্মাণের ফলে জ্বালানি তেলের পরিবহন ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং সহজে, দ্রুততম সময়ে ও প্রতিকূল পরিবেশেও দেশের উত্তরা রেলের চাহিদা মোতাবেক ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা যাবে।

বর্তমানে রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত হতে বার্ষিক ৬০-৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হয়। পাইপলাইন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ভারত হতে ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে।

পার্বতীপুরে বর্তমানে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫ হাজার মেট্রিক টন। চলমান প্রকল্পের আওতায় ২৮ হাজার ৮শ মেট্রিক টন স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পাবে।

ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের তালিকাভুক্তকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের আমদানি উৎস বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে ২৮ আগস্ট ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেডকে জি-টু-জি ভিত্তিতে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেডকের অন্তর্ভুক্তির ফলে তুলনামূলক স্বল্প সময়ে ও সাশ্রয়ী মূল্যে ডিজেল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল, এভিয়েশন ফুয়েল আমদানি করা সম্ভব হবে। ফলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষত খুলনা এলাকার বিদ্যুৎ ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাসের বিপুল চাহিদার কথা বিবেচনা করে ক্রস-বর্ডার পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে রিগ্যাসিফাইড এলএনজি (আরএলএনজি) আমদানির বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। এ লক্ষ্যে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের হাই এনার্জি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে উভয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পেট্রো বাংলার দুটি পৃথক নন বাইন্ডিং এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। বর্তমানে আরএলএনজি আমদানির বিষয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পেট্রোবাংলার সম্পাদিতব্য গ্যাস সরবরাহ চুক্তি প্রস্তুতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

অফসোর গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগভীর সমুদ্র SS-04 ও SS-09 এর জন্য ONGC Videsh Limited ও Oil India Limited এর সঙ্গে পেট্রোবাংলার দুটি উৎপাদন বণ্টন চুক্তি-পিএসসি রয়েছে, যার আওতায় উভয় ব্লকে দুটি অনুসন্ধান কূপ (তিতলি-১ ও মৈত্রি-১) খননের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এসএম