আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। হালিশহর, ইপিজেড পতেঙ্গাসহ আশেপাশের এলাকায় প্রচুর মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। এসব এলাকায় পানীয় জলের মূল উৎস ওয়াসার পানি। বেশিরভাগ মানুষ কোনো প্রকার বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই পানি পান করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৯-২৫ আগস্ট আইইডিসিআরের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল সরেজমিনে রোগী, এলাকার পরিবেশ, পানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চালায়। 

সম্প্রতি আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীনের সই করা প্রতিবেদনটি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠানো হয়।

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে সেসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিআইটিআইডিতে আগস্ট মাসে মোট ৮৯৮ জন নতুন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। এছাড়া কমিউনিটি পর্যায়ে তদন্ত দল আরও ১৩১ জন ডায়রিয়া রোগী শনাক্ত করে। বিআইটিআইডিতে ভর্তি রোগী ও কমিউনিটি পর্যায়ে শনাক্তকৃত রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। 

তদন্ত চলাকালে ১৯০ জন রোগীর বিস্তারিত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৬ জন, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৪ জন ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ২২ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে রয়েছে ৪৮ শতাংশ নারী ও ৫২ শতাংশ পুরুষ। তাদের মধ্যে ২৭ শতাংশ পেশায় কল-কারখানার ও পোশাক কারখানার কর্মী। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রাদুর্ভাব এলাকায় গভীর নলকূপ থাকা সত্ত্বেও পানিতে আয়রণের উপস্থিতি ও লবণাক্ততার কারণে অধিকাংশ অধিবাসী তা পান করার পরিবর্তে গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া ৩৮, ৩৯ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক অংশে পরিচ্ছন্নতার অভাব দেখা গেছে।

প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগকে ৩৮, ৩৯ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে অধিবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সিভিল সার্জন কার্যালয় চট্টগ্রামের সহায়তায় পানি বিশুদ্ধকরণ (ক্লোরিন) ট্যাবলেট বিতরণের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগকে আরও সক্রিয় করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা নিয়ে ওই ওয়ার্ডসমূহে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা ও নিয়মিত তদারকি করার আহ্বান জানানো হয়।

প্রতিবেদনে, চট্টগ্রাম ওয়াসার সঙ্গে আলোচনা করে পানি সরবরাহ লাইন নিয়মিত সংস্কারপূর্বক নিরাপদ রাখার পাশাপাশি পানিতে ক্লোরিনের আদর্শ মাত্রা বজায় রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া পানির জলাধার (ট্যাংক) নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার লক্ষে নগরবাসীকে সচেতন করার কথা বলা হয়েছে। 

ওয়াসার পানির বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহকে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি তিনি।

কেএম/এমএ