বাংলাদেশ সরকার ৬ হাজার নতুন সমাজকর্মী নিয়োগ দেবে, যা কর্মীর সংখ্যাকে ৩ হাজার থেকে ৯ হাজারে উন্নীত করবে। একটি বিস্তৃত জাতীয় গৃহস্থালি জরিপ প্রকাশের পর শিশুদের জন্য এই ঘোষণাকে যুগান্তকারী হিসেবে দেখছে ইউনিসেফ।

অন্যদিকে শিশুদের, অরক্ষিত ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সহিংসতা, শোষণ ও নিগ্রহ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ঘোষণা অনন্য সুযোগ তৈরি করবে বলে মনে করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে ‌শিশু সুরক্ষাবিষয়ক জাতীয় সম্মেলনে শিশু সুরক্ষা পরিষেবা জোরদার করা এবং সমাজকর্মীর সংখ্যা ২০০ শতাংশ বাড়ানোর এই ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইউনিসেফ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মেলন একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কমিউনিটি পর্যায়ে শিশু সুরক্ষা সেবা সহজলভ্য করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সমাজকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির ঘোষণায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট বলেন, ‘সমাজকর্মীরা কমিউনিটির গভীরে পৌঁছে যান যেখানে শিশুদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় তাদের। গুরুত্বপূর্ণ পেশাগত যত্ন থেকে যাতে আরও বেশি সংখ্যক শিশু উপকৃত হয়’।

আজকের উচ্চ পর্যায়ের শিশু সুরক্ষাবিষয়ক সম্মেলন সমাজসেবা কর্মীবাহিনী, প্রাথমিক অবস্থাতে ঝুঁকি শনাক্তকরণ এবং তা মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়া, প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার ও চাহিদা এবং শিশু সুরক্ষার আইনি কাঠামো বিষয়ক আলোচনায় সরকার, সুশীল সমাজ, বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের একত্রিত করেছে বলে মনে করে ইউনিসেফ।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে শিশুরা একটি উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। শিশুদের, বিশেষ করে সবচেয়ে অরক্ষিত এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সহিংসতা, শোষণ ও নিগ্রহ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আজকের আয়োজন একটি অনন্য সুযোগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে ইইউ সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, যিনি শিশু অধিকার সংক্রান্ত সুপ্রিম স্পেশাল কমিটিরও একজন সদস্য।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একত্রে, ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারকে একটি বিস্তৃত জাতীয় শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করে।

এখানে উল্লেখ্য যে, জাতীয় গৃহস্থালি জরিপে উঠে আসে যে, ১৫ বছরের কমবয়সী বাংলাদেশি শিশুদের প্রায় ৮৯ শতাংশ বা সাড়ে ৪ কোটি শিশু নিয়মিত বাড়িতে সহিংসতার শিকার হয়, যা অত্যন্ত মর্মান্তিক।

অন্যদিকে ৩০ লাখেরও বেশি শিশু শিশুশ্রমের ফাঁদে আটকে আছে, যাদের মধ্যে ১৩ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে না। প্রায় অর্ধেক শিশুর জন্ম নিবন্ধন নেই। এক লাখের বেশি শিশু প্রাতিষ্ঠানিক যত্নে রয়েছে এবং তাদের পারিবারিক সহায়তার অভাব রয়েছে। প্রতি দুইজন মেয়ের মধ্যে একজনকে বিয়ে দেওয়া হয় শিশু থাকা অবস্থায়। লাখ লাখ শিশু রাস্তায় বসবাস করে।

জেইউ/এমএ