সড়কে ধুলার মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি, কড়া রোদ, ঝড়বৃষ্টিতেই কাজ করছেন ট্রাফিকের মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। এরমধ্যে প্রতিদিন ব্যস্ত হয়ে সড়কে ট্রাফিক আইন না মানার চ্যালেঞ্জ নিতে দেখা যায় অনেক পথচারী, যাত্রী ও চালকদের। উন্নয়নমূলক কাজের কারণে সড়কে একদিকে যানজট অন্যদিকে আইন অমান্যকারীদের কারণে ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে নিয়মিত।

তাই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সার্বিক শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজধানীতে ‘ওয়ান পারসন ওউন রেসপন্সিবিলিটি (One Person Own Responsibility বা OPOR)’ শীর্ষক বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ট্রাফিক বিভাগ।

এই OPOR থিমের আওতায় একজন করে প্রত্যেক আইন অমান্যকারীকে সড়কে ধরে ধরে ট্রাফিক আইন, নাগরিক দায়িত্ব ও ট্রাফিক শৃঙ্খলা সম্পর্কে তাৎক্ষণিক বোঝানো-শেখানো হবে। ব্যক্তি স্বেচ্ছায় প্রতিদিন রাস্তায় চলাচলে নিজে যেমন সড়ক আইন জানবেন, মেনে চলবেন, তেমনি অন্যকেও অনুপ্রাণিত করবেন। এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ তাদেরকে স্ব-উদ্যোগে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ওয়ারীর ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জমুখী বিপুল সংখ্যক সাধারণ যাত্রী বিভিন্ন দিকে যাতায়াত করেন। এ কারণে অফিস টাইমে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় গণপরিবহনের সঙ্গে যাত্রী ওঠানামা নিয়ে মাঝে মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেই OPOR নামক অভিনব এ উদ্যোগ মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) থেকে বাস্তবায়ন শুরু করেছে ট্রাফিক পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহম্মেদ জানান, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার, ডেমরা চৌরাস্তা, সুলতানা কামাল ব্রিজ ও তৎসংলগ্ন কোনাপাড়া, বামৈল, আমুলিয়া, মিরপাড়া, সারুলিয়া, রানীমহল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নীতকরণের নির্মাণ ও সংস্কারকাজ চলমান থাকায় জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তি লাঘবে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ডেমরা ট্রাফিক পুলিশ। সড়কের সংস্কার কাজ চলমান থাকায় প্রায়ই রাস্তায় দিনে-রাতে যানজট সৃষ্টি ও গাড়ি নষ্ট হলে জনসাধাণের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। বৃষ্টিপাত হলে অসমান বা নির্মাণাধীন সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি জমে জলাবদ্ধতা এবং বড় ও মাঝারি গর্তের সৃষ্টি হলে দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না। তখন ডেমরা ট্রাফিক পুলিশেরও কষ্টের বা দুর্ভোগের সীমা থাকে না।

ট্রাফিক ওয়ারীর (ট্রাফিক-ডেমরা জোন) সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ইমরান হোসেন মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জমুখী বিপুল সংখ্যক সাধারণ যাত্রী বিভিন্ন দিকে যাতায়াত করেন। এ কারণে অফিস টাইমে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় গণপরিবহনের সঙ্গে যাত্রী ওঠানামা নিয়ে মাঝেমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সড়কে মানুষের আইন না মানার প্রবণতা, প্রতিকূল পরিবেশসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিয়মিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়।

সার্বিক দিক বিবেচনায় ট্রাফিক-ডেমরা জোন টিম গণপরিবহনে যাত্রী ওঠানামাসহ সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়ানো, যত্রতত্র পার্কিং না করাসহ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সার্বিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ‘ওয়ান পারসন ওউন রেসপন্সিবিলিটি’ শীর্ষক বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সমাজের প্রত্যেক নাগরিক নিজস্ব দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে আইন মেনে সুশৃঙ্খভাবে চলাচলের চেষ্টা করবেন। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি স্বেচ্ছায় প্রতিদিন রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে একটি করে সড়ক আইন জানবেন, মেনে চলবেন ও অন্যকে অনুপ্রাণিত করবেন। এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ তাদেরকে স্ব-উদ্যোগে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের আইন না মানার প্রবণতা বেশি। সেটা নানা কারণেই হতে পারে। জোর করে কাউকে আইন মানতে বাধ্য না করে যদি ব্যক্তি নিজেই আইন জানেন ও মানেন সেটি বেশি ফলপ্রসূ হয়। এটা হয়তো একদিনে সম্ভব নয়। যখনই আমরা কাউকে সড়কে আইন অমান্য করতে দেখবো তাকে ডেকে প্রাকটিক্যালি আইন ও নিয়ম সম্পর্কে জানাবো, শেখানোর চেষ্টা করবো, বোঝানোর চেষ্টা করবো আইন মানার সুফল, কুফল, নাগরিক হিসেবে নিজের দায়িত্ব। এই উদ্যোগের আওতায় প্রতিদিন একজন করে হলেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যেতে চাই। গাড়ির চালক, পথচারী যাত্রী সবাইকে এর আওতায় এটি চলমান থাকবে। এটা ফলপ্রসূ হলে অবশ্যই ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারসহ অন্যান্য এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার চিত্রে তুমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।

জেইউ/জেডএস