ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু। এছাড়া, মংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সারাদেশে গড়ে তোলা হয়েছে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের তুলনায় আরও বেশি সহজ হওয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাড়ানোর লক্ষ্যে সম্প্রতি দিল্লি সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ সফরের প্রতিনিধি দলে ছিলেন বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানও। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে। ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা যখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন, তখন শুধু বাংলাদেশের বাজারের দিকে তাকানো উচিত নয়। তাদের উচিত এটিকে ভারতের উত্তর-পূর্বের সঙ্গে একত্রিত করা। এর কারণ হলো, আমরা এখন যোগাযোগের পাশাপাশি সড়ক, রেল ও নৌপথে কানেক্টিভিটির বিষয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। বাংলাদেশ ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য একটা বিশাল বাজার হয়ে উঠবে।’

এদিকে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বিঘ্ন পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে দেশের ১৭ শতাংশ জাতীয় আয় বাড়বে। অন্যদিকে, ভারতের জাতীয় আয় ৮ শতাংশ বাড়বে। বিশ্বব্যাংকের ‘কানেক্টিং টু থ্রাইভ : চ্যালেঞ্জিং অ্যান্ড অপরচুনিটিস অব ট্রান্সপোর্ট ইন্টিগ্রেশন ইন ইন্টার্ন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

দুই দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে ১৮২ শতাংশ এবং বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি বাড়বে ১২৬ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতের ট্রাক চলাচলের অনুমোদন নেই। ফলে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো কেবল শিলিগুড়ি করিডোরের মাধ্যমে ভারতের মূল ভূখণ্ডের মাধ্যমে সংযুক্ত। এ রুট দীর্ঘ ও ব্যয়সাপেক্ষ

এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দুই দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে ১৮২ শতাংশ এবং বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি বাড়বে ১২৬ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতের ট্রাক চলাচলের অনুমোদন নেই। ফলে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো কেবল শিলিগুড়ি করিডোরের মাধ্যমে ভারতের মূল ভূখণ্ডের মাধ্যমে সংযুক্ত। এ রুট দীর্ঘ ও ব্যয়সাপেক্ষ।

উদাহরণস্বরূপ, ভারতের আগরতলার পণ্য ১৬০০ কিলোমিটার ঘুরে শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে কলকাতা বন্দরে পৌঁছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারলে আগরতলা থেকে কলকাতা বন্দরে পৌঁছাতে মাত্র ৪৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারলে আগরতলা-কলকাতা পণ্য পরিবহনে খরচ কমবে ৮০ শতাংশ।

সমুদ্রপথ ছাড়াও বাংলাদেশ ও ভারত সড়ক ও রেলপথে সংযুক্ত। ভারত চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে নিয়মিত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা চাচ্ছে। ইতোমধ্যে চারটি নির্ধারিত ট্রায়াল রান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর মানে, ভারত বাংলাদেশের সমুদ্র ও স্থলবন্দর ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নেবে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরে ভারত বাংলাদেশকে একই ধরনের সুবিধা দিয়েছে। দেশটি বলেছে, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতের নির্ধারিত স্থলবন্দর, বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে।

ভারতের এ প্রস্তাব উভয় দেশের জন্যই ‘জয়-জয় পরিস্থিতি’ তৈরি করবে। বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা যদি দেখেন ভারতীয় বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে কার্যক্রম পরিচালনার খরচ যুক্তিসঙ্গত, তাহলে তারা সুবিধা নেবে।

বর্তমানে নেপাল ও ভুটানের ট্রাক ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি করছে। কিন্তু বাংলাদেশি ট্রাক ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে যেতে পারে না। আগামী দিনে বাংলাদেশও ভারতের কাছ থেকে একই রকম সুফল পাবে বলে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস।

বর্তমানে নেপাল ও ভুটানের ট্রাক ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি করছে। কিন্তু বাংলাদেশি ট্রাক ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে যেতে পারে না। আগামী দিনে বাংলাদেশও ভারতের কাছ থেকে একই রকম সুফল পাবে বলে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস

প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়েও কথা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ভবিষ্যতে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় বিনিয়োগ পাবে বাংলাদেশ। যা থেকে উভয় দেশই উপকৃত হবে।

এদিকে, ভারত পশ্চিমবঙ্গের হিলি থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত একটি মহাসড়কসহ নতুন উপ-আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প শুরু করার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে এবং এ বিষয়ে একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে।

একই চেতনায় ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রি-পক্ষীয় হাইওয়ে প্রকল্পের চলমান উদ্যোগে অংশীদার হওয়ার জন্য বাংলাদেশ তার আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

যদিও যৌথ বিবৃতিতে পাটজাত পণ্যের ওপর ভারতের অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা করা হয়নি। তবে, ভারত হয়তো শিগগিরই তা প্রত্যাহার করবে। এফবিসিসিআই বিষয়টি নিয়ে ভারতের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে।

সর্বশেষে, ভারত বাংলাদেশকে তার ভূখণ্ড এবং স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বিনামূল্যে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান করেছে। এর মানে বাংলাদেশ যদি ভারতীয় বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানি করে তাহলে ভারত কোনো ফি আরোপ করবে না। এটা অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক খবর।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। ফেনী সেতুর দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার। ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন নির্মাণ করেছে এ সেতু। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এ সেতু দিয়ে সহজেই ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হবে।

মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, ইএমবিএ ছাত্র, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়