২০১৪ সালে রমনা থানা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান ওরফে রানাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পলাতক মো. ইকবাল হোসেন তারেককে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার র‌্যাব-৩ এর একটি দল। চাঁদপুর সদরের উত্তর ইছুলীর নুরুল ইসলামের ছেলে তারেক।

র‌্যাব বলছে, সুইফ ক্যাবল লিমিটেড নামক ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তারেক। প্রতিষ্ঠানের মালিক কামরুল ইসলাম এবং তানভিরুজ্জামান রনির সঙ্গে নিহত মাহবুবুর রহমান রানার ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে রানাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যায় জড়িতদের মধ্যে অন্যতম তারেক। হত্যার পর বাবার নাম পরিবর্তন করে আত্মগোপনে যায় তারেক।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, র‌্যাব-৩ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, সুইফ ক্যাবল লিমিটেড নামক ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তারেক। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিল কামরুল ইসলাম এবং তানভিরুজ্জামান রনি। তাদের সঙ্গে নিহত মাহবুবুর রহমান রানার ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। ওই বিরোধ নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ডিসের ক্যাবল কেটে দিত এবং উভয়পক্ষের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ লাগত।

এসব ঘটনার জের ধরে গত ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মাহবুবুর রহমান রানা মোটরসাইকেলযোগে মগবাজার চৌরাস্তা থেকে মসজিদের পাশের গলিতে প্রবেশ করলে বাটার গলির মুখে গতিরোধ করে মুখে ও মাথায় এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তারেক ও হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া অন্যরা। এ সময় স্থানীয় লোকজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলি ছোড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা রানাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি বোমা ও রক্তমাখা চাপাতি উদ্ধার করে।

ওই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা হয়। মামলার পরই জড়িতরা আত্মগোপনে চলে যায়। মামলার ঘটনায় সুইফ ক্যাবল লিমিটেডের মালিক কামরুল ইসলাম অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়।

মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৪ জন আসামির বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৩০ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযুক্ত ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন গ্রেপ্তার এবং চার জন পলাতক ছিলেন।

পলাতক আসামির মধ্যে ইকবাল হোসেন তারেক (৩৮) একজন। তার নামে ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর আদালত হতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

তারেক সম্পর্কে র‌্যাব-৩ সিও বলেন, যশোরের একটি স্কুল হতে এসএসসি পাসের পর ২০০৯ সালে ঢাকায় আসে তারেক। স্কুল জীবন হতেই গাঁজায় আসক্ত। তারেকের নিজ বাড়ি চাঁদপুর এলাকায়। ২০০৭ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

হত্যাকাণ্ডে তারেকের জড়ানোর কারণ সম্পর্কে লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১১ সাল থেকে হত্যাকাণ্ডের পূর্ব পর্যন্ত তারেক তৎকালীন সুইফ ক্যাবল লিমিটেড নামক ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। ওই সময় তিনি নিজেকে ইকবাল হোসেন ওরফে তারেক (৩৩) ও পিতার নাম নুরুল ইসলাম বলে পরিচয় দেন। তার গ্রেপ্তারের পেছনে নিহত রানা গ্রুপের হাত ছিল বলে ক্ষোভ তৈরি হয় তারেকের। সেই ক্ষোভ এবং ডিস মালিকের নির্দেশে রানা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় তারেক।

নাম পেশা বদলে আত্মগোপন

হত্যাকাণ্ডের পর তারেক চাঁদপুর এলাকায় গিয়ে চাষাবাদ শুরু করে। এরপর যশোর গিয়ে মাদক ব্যবসায় জড়ায়। ২০১৯ সালে ঢাকায় এসে বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে পরিত্যক্ত কার্টুন সংগ্রহ করে বিক্রি করার পাশাপাশি মাদক ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকে তারেক। মাদকসহ একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও নিজের নাম তাহের ও পিতা আব্দুর রহিম হিসেবে পরিচয় দেয়। ফলে সে একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও রানা হত্যা মামলার দায় হতে রক্ষা পেয়ে যায়। তার নামে হত্যা ও মাদকসহ ৪ টি মামলা রয়েছে।

জেইউ/এমএ