রাজধানীর ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডের একটি বাসার ছাদ থেকে পড়ে মালয়েশিয়ার এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজরিয়ান মোস্তফা মৌমিতার (২০) মৃত্যুর রহস্য এখনও কাটছে না। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। রহস্য উদঘাটন না হলেও এ মৃত্যুর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

ঘটনার পর থেকে মৌমিতার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে তারা সন্দেহ করছেন বাড়ির মালিকের ছেলে ফাইজারকে। এ ঘটনায় ফাইজারের বন্ধু আদনানকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকও করেছে। তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মৌমিতার পরিবারের যেসব অভিযোগ
তিন বোনের মধ্যে মৌমিতা মেজ। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়াশোনার জন্য তার মা-বাবাসহ চলে যান। কিন্তু করোনার সময় গত বছরের ১৮ জুন দেশে আসেন মা বাবাসহ। দেশে এসে ধানমন্ডির ওই বাসায় উঠেন।

পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনার শুরু দিকে দেশে আসার পর থেকে ফাইজার বিভিন্ন সময় মৌমিতাকে উত্ত্যক্ত করত। ফাইজারের পরিবারকে এ বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও তারা কোনো প্রতিকার করেনি। উল্টো এ বিষয়ে ফাইজারের পরিবার তার পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে।

এ বিষয়ে মৌমিতার ফুফু শাহনেওয়াজ খানম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মৌমিতাকে ছাদে কিংবা সিঁড়িতে একা পেলেই ফাইজার তার বন্ধুদের নিয়ে উত্ত্যক্ত করত। ঘটনার দিন বিকেল ৪টায় মৌমিতা যখন ছাদে উঠে তখন ফাইজারও তার বন্ধুরা ছাদের গেট আটকে দেয় বলে আমরা জানতে পেরেছি। এরপরই মৌমিতার মরদেহ পাওয়া যায়। এছাড়া আশপাশের অনেক ভবনের লোকজন দেখেছিল, ঘটনার দিন বিকেলে ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ছাদে অনেক লোকজন ছিল। কিন্তু পুলিশ ফাইজারকে আটক না করে তার বন্ধুকে আটক করেছে। ফাইজারকে আটক করলে সব তথ্য পাওয়া যাবে।

পুলিশ যা বলছে
ঘটনার পর থেকে মৌমিতার মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে কলাবাগান থানা পুলিশ। পুলিশ বলছে, মৌমিতার মৃত্যুর রহস্য এখনও উদঘাটন না করা গেলেও এ বিষয়ে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে তারা তদন্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় একটি ছেলেকে আমরা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তদন্ত স্বার্থে এসব তথ্য বলা যাচ্ছে না। তবে এসব তথ্য আমরা যাচাই-বাছাই করছি। তবে মৌমিতার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো আমরা এখনই বলতে চাচ্ছি না। তবে আমদের হাতে অনেক তথ্য এসেছে। এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করে আমাদের তদন্ত সামনের দিকে এগোচ্ছে।

তিনি বলেন, সুরতহালে আমরা মরদেহের কোন কোন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল, সেগুলো আমরা নোট করেছি। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট এসে ঘটনাস্থলে থেকে নমুনা নিয়ে গেছে। এছাড়া আমরা প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছি রহস্য উদঘাটনে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে এ বিষয়ে অনেক কিছু জানা যাবে।

পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, যেহেতু এখনও লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি, তাই পরিবার কী বলছে তা আপাতত আমরা মাথায় নিচ্ছি না। তবে এ বিষয়ে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা হলে জানা যাবে পরিবার কী অভিযোগ করেছে।

এদিকে শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মৌমিতার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে বুঝা যাচ্ছে মৌমিতার মৃত্যু ছাদ থেকে পড়ে হয়েছে। তবে তাকে ধর্ষণ বা বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি না তা জানতে রক্ত, ভিসেরা ও হাইভেজনাল সোয়াবের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

গত শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় ধানমন্ডির ৮ নাম্বার রোডের বাসার ছাদে উঠে মৌমিতা। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিল্ডিংয়ের পেছনের গলিতে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে উদ্ধার করে গ্রিনরোডের গ্রিনলাইফ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে মৌমিতার মরদেহ মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এমএসি/এসএসএইচ