বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিংকে জানিয়েছে ঢাকা। বিষয়টি নিয়ে বেইজিং নেপিদোর সঙ্গে আলোচনা করবে বলে রাষ্ট্রদূত আশ্বস্ত করেছেন। 

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলমের স‌ঙ্গে বৈঠক করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব।

মো. খুরশেদ আলম বলেন, আমাদের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সীমান্তের বিষয়ে ওইদিন তিনি মিটিংয়ে ছিলেন না। আমরা সবাইকে অবহিত করেছি। বেইজিং এ বিষয়ে নেপিদোর সঙ্গে আলোচনা করবে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে।

প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন আগে থেকে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থায় ছিল। এটা যেন ত্বরান্বিত হয়, সে বিষয়ে বলেছি। ত্রিপক্ষীয় ইস্যু আগে। প্রত্যাবাসন নিয়ে তারা যেহেতু আগে একটি ইনিশিয়েটিভ নিয়েছিল, সেটির বিষয়ে আমরা অনুরোধ করেছি। তাদের বলেছি, আপনারা ইনিশিয়েটিভ নিন।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এখানকার পরিস্থিতি ভালো নয়। তারা (চীন) রাখাইনে ঘরবাড়ি বানিয়েছে, যেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে গেলে সেখানে থাকতে পারে। ওই জায়গার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির ওপর এটি নির্ভর করছে।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম

সীমান্তে চলমান পরিস্থিতির মধ্যে প্রত্যাবাসন সম্ভব কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশেদ আলম বলেন, তারা যে জায়গায় নিয়ে যাবে, সেখানে কোনো যুদ্ধ হচ্ছে না।

দিন ছয়েক আগে আসিয়ান বাদ দিয়ে বিদেশি দূতদের ডেকেছিল ঢাকা। সেখানে উপস্থিত হয়নি চীন। চীনের না থাকার কারণ জানা গেছে কি না— জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পররাস্ট্রসচিব বলেন, অবশ্যই কারণ ছিল। আমরা তো বন্ধুপ্রতিম একটি দেশের কাছ থেকে সেভাবে ব্যাখ্যা চাইনি। তাদের সমস্যা ছিল।

সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে চীনের আশ্বাসে ঢাকা আশ্বস্ত হতে পারছে কি না— এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা চীনের আশ্বাসে বিশ্বাস করি কি না করি, এতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু চীন যেহেতু আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমরা মনে করি তাদের এটি বললে যথাস্থানে পৌঁছে দেবে।

এর আগে, সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে আখ্যা দেন।

ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাতের জেরে বাংলাদেশ যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, সেগুলো জানাতে গত সোমবার প্রথম দফায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আসিয়ান জোটের দূতদের ডাকা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে সেই ব্রিফিংয়ে ঢাকায় মিশন না থাকা লাওস ও কম্বোডিয়া বাদ ছিল। বাদ ছিল মিয়ানমারও। বাকি সাত দেশের কূটনীতিকেরা ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আসিয়ানের সহযোগিতা চায় ঢাকা।

পরদিন মঙ্গলবার ঢাকায় নিয়োজিত অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতদের একই ভেন্যুতে ডেকে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

সে‌দিনের ব্রিফিংয়েও বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০ জনের মতো রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়াসহ রাশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং আরব বিশ্বের দূতরা উপস্থিত ছিলেন। তবে ব্রিফিংয়ে চীন উপস্থিত হয়নি।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এক মাস ধরে গোলাগুলি চলছে। সম্প্রতি একটি মর্টার শেল এসে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখায় পড়ে। এতে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় এক শিশুসহ পাঁচ রোহিঙ্গা নাগরিক আহত হন।

এর আগেও কয়েক দফায় মর্টার শেল ও গোলা এসে পড়ে বাংলাদেশের ভেতরে।

প্রতিবারই মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। বিশেষজ্ঞরা সমালোচনা করে বলছেন, এমন মৌখিক প্রতিবাদ কার্যকর কিছু নয়।

এনআই/আরএইচ