বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস

র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দেশটির অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে র‍্যাব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া কোনো শাস্তি নয়। কর্মকর্তারা যেন তাদের আচরণ পরিবর্তন করে, সেজন্যই দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে নিরাপত্তা সহযোগিতার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত রয়েছে। একসঙ্গে কাজ করছে। আমরা আশা করছি, র‍্যাবের আচরণ পরিবর্তন হবে।

পিটার হাস বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এটি খুব ভালো সংকেত।

গত বছরের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং এর সাবেক-বর্তমান ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ।

অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত শ্রম অধিকার, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতি, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং বাণিজ্যসহ যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন।

শ্রম অধিকারের বিষয়ে হাস বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এখনও উদ্বেগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায়, বাংলাদেশে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ থাকুক। এতে করে তারা নিজেদের অধিকার আদায়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে দরকষাকষি করতে পারবে।

গুমের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত জানান, গুমের অভিযোগ তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন প্রক্রিয়া দেখতে চায়।

ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে পিটার হাস বলেন, এটি এমন একটি কৌশল, এখানে যোগ দেওয়া না দেওয়াটা কোনো বিষয় নয়। এটি কোনো ক্লাব নয়। এটি কতগুলো ভিত্তির ওপর গড়ে উঠেছে, যেমন- মুক্ত, নিরপেক্ষ, প্রাণবন্ত এবং সমৃদ্ধ নীতির ওপর। প্রত্যেক দেশেরই তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। বাংলাদেশ এটিকে সমর্থন করছে না, আমি বিষয়টাকে এমনভাবে দেখছি না। তবে এতে বাংলাদেশের যোগ দেওয়া না দেওয়াটা কোনো বিষয় নয়। এটি বাংলাদেশ কিভাবে নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, গণতন্ত্র একটি সংগ্রাম। প্রতিনিয়ত এটি নিয়ে কাজ করতে হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। আমরা গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করছি।

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ- বিআরআই প্রসঙ্গে পিটার বলেন, বিআরআইয়ে যোগ দেওয়াটা বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ কোন জোটে যোগ দেবে, সেটা তাদের বিষয়।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশে একটি প্রতিযোগিতা রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা উপযুক্ত বাজার খুঁজবেন। সেক্ষেত্রে যেখানে নিরাপত্তা থাকবে, নিরাপদ পরিবেশ থাকবে; সেটাই তারা বেছে নেবেন।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

এনআই/এমএইচএস