দুই পাশের সড়কে থমকে আছে যানবাহন/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

রাজধানীর উত্তরা-বিমানবন্দর সড়কে গত কয়েক দিন ধরেই অসহনীয় যানজট। একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকা ও বেহাল রাস্তার কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হয় ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের। তার ওপর আজ ভোরে হওয়া বৃষ্টি রাজধানীবাসীর ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় সকাল থেকেই স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রোববার (২ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিমানবন্দর সড়ক প্রায় থামকে ছিল। ঢাকার ভেতরে ঢোকা এবং বের হয়ে যাওয়ার দুই পথেই তীব্র যানজট। সেই সঙ্গে সড়কের মোড়গুলোতে কাজে বের হওয়া মানুষের ভিড়। এ কারণে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটাও দায় হয়ে পড়ে। কাজে বের হওয়া মানুষ যানজটের কারণে বাসে উঠছে না, আবার যারা বাসে করে যাচ্ছিলেন যানজট তীব্র হওয়ায় তারাও বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করছেন।  

আব্দুল্লাহপুর থেকে উত্তরা, এয়ারপোর্ট, খিলক্ষেত, বিশ্ব রোড, বনানী, কুড়িল প্রগতি স্বরণিজুড়েই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বনানী, বিশ্বরোড, খিলক্ষেত, কাওলা, এয়ারপোর্ট, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর পেরিয়ে গেছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি।  

আরও পড়ুন : যানজটে স্থবির ঢাকা : সমাধান কোথায়? 

ট্রাফিক বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিমানবন্দর সড়ক বলতে গেলে প্রায় কলাপস করেছে। ইনকামিং আউটগোইং কোনোটাই হচ্ছে না। এর কারণ উন্নয়নকাজ চলমান থাকা ও বেহাল সড়ক। তার ওপর বৃষ্টির পানি গর্তে জমে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তাই যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। যা দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি করছে। তাছাড়া বৃষ্টির মধ্যে অফিসগামী মানুষের ভিড়। মূলত আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে বনানী পর্যন্ত আবার বনানী থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কের দুই অংশজুড়েই তীব্র যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। ট্রাফিক বিভাগ দ্রুত এ যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে।

জানা গেছে, বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট ছিল। ফলে কাজে বের হওয়া মানুষ গণপরিবহন না পেয়ে ছাতা মাথায় রাস্তায় অপেক্ষায় ছিল। রাস্তায় মানুষ দাঁড়িয়ে থাকার কারণেও অন্যান্য যানবাহনে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। যার প্রভাব পড়ে যানজটে। এর মধ্যে বিমানবন্দরের মতো একটি ব্যস্ত সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেওয়ায় তা পুরো শহরেই ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। 

উত্তরা থেকে বনানীতে এসে প্রতিদিন অফিস করেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফয়সাল। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ৯টায় আমার অফিস শুরু হয়। সে হিসেবে আমি সাড়ে ৭টায় বাসে উঠি। বাস বিমানবন্দরে এসে যানজটে আটকা পড়ে। টানা ১ ঘণ্টা অপেক্ষার পর হাঁটা শুরু করি। কিন্তু ফুটপাথে মানুষের ব্যাপক চাপ। এ জন্য ঠিক মতো হাঁটাও সম্ভব হয়নি। সীমাহীন ভোগান্তির পর আমি ১০টার দিকে অফিসে ঢুকি।

আরও পড়ুন : মরণ ফাঁদের নির্মাণকাজ 

ঢাকার যানজট পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাবলিক গ্রুপ ট্রাফিক এলার্টে বিভিন্ন পোস্ট করছেন অনেকেই। 

এদের মধ্যে সাইদুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, অভিভাবকহীন বিমানবন্দর সড়কে যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। একদিকে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অন্যদিকে বৃষ্টি সব মিলে সকাল থেকে স্থবির বিমানবন্দর সড়ক। মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই।

বিমানবন্দর সড়ক হয়ে আসমানী পরিবহনে আসা এনামুল হক নামে এক যাত্রী বলেন, এয়ারপোর্টে সড়ক পুরোটাই অচল হয়ে আছে। কোনো গাড়ি নড়ছে না। হাজার হাজার অফিসগামী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। ২-৩ ঘণ্টা লাগছে এ সড়ক পাড়ি দিতে। যারা অফিসের জন্য সকালে বের হয়েছেন তারা কেউই যথা সময়ে অফিস পৌঁছাতে পারেননি। 

আরও পড়ুন : এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার দেশ!

এ সড়কে প্রায় আড়াই ঘণ্টা আটকে থাকা অনাবিল পরিবাহনের বাসের চালক বেলায়েত হোসেন বলেন, আব্দুল্লাহপুর থেকে এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যা হাউজবিল্ডিং হয়ে আজমপুর, রাজলক্ষ্মী, জসিম উদ্দিন, এয়ারপোর্ট, কাওলা, খিলক্ষেত পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সড়ক পার হতে কম পক্ষে দুই তিন ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। বলতে গেলে পুরো সড়কই থেমে আছে। 

এএসএস/এসকেডি