জেনেভায় জাতিসংঘ ভবনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। 

সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতির অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে ১৯৭১ এর গণহত্যার শিকার এবং তাদের বংশধরদের সম্মান জানানো একান্ত প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশের গণহত্যা আজ বিশ্বের কাছে ইতিহাসের এক বিস্মৃত অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এই সম্মেলনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫১তম অধিবেশন চলছে। সেমিনারের এই সাইড ইভেন্টটি ইউরোপভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ) এবং সুইজারল্যান্ড মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়। 

আরও পড়ুন : একাত্তরের গণহত্যার দায়ে পাক সেনাবাহিনীর বিচার চায় ভারত

জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি সঞ্চিতা হক সেমিনারে  তার বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য ও শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাস লড়াই করেছে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করেছে। বাংলাদেশের মানুষ জাতিসংঘের কাছে এই গণহত্যার সুবিচার চায়, জাতিসংঘের স্বীকৃতি চায়।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার একাত্তরের গণহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের যে কোনো জায়গায় নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণহত্যার নিন্দা জানায়। তিনি এই স্পর্শকাতর বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্ববাসীর সমর্থন আহ্বান করেন। 

বিচারপতি সৈয়দ আলী শাকার বলেন, গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং সঠিক বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন করতে হবে, যেখানে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও প্রতিনিধি থাকতে হবে। বর্তমানে সুইডেনে নির্বাসিত পাকিস্তানি এই নাগরিক শাকার বাংলাদেশের একজন প্রবল সমর্থক এবং একাত্তরে গণহত্যার তীব্র সমালোচক। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকার ও সামরিক শাসনে বাংলাদেশের পক্ষে তার ভূমিকার জন্য তাকে ছয় মাসের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়। 

আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড : বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান

অধ্যাপক ডা. তাজিন মুরশিদ বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আমাদের প্রচেষ্টা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। যদি এ ব্যাপারে দ্রুত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা না হয়, জনতার আদালত গঠন করে একাত্তরের গণহত্যার একক এবং সম্মিলিত হত্যাযজ্ঞের শুনানি নথিভুক্ত করা হবে এবং দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে, যদিও সেই রায় কার্যকর করা সম্ভব নাও হতে পারে। এছাড়া এই গণহত্যার রায় এবং দলিল ও প্রমাণ ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে। 

বাংলাদেশের বন্ধু পদকে ভূষিত আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, বাংলাদেশ গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চায়। 

সূত্র : বাসস। 

এনএফ