খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্য তরুণদের সঙ্গে ঘর ছাড়েন শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২)। তাকে প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তবে পটুয়াখালিতে যাওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন জঙ্গিবাদ ভুল পথ।

নিলয় বলছেন, পরিবার ছেড়ে হিজরতের কথাটা যখন আসে তখন থেকে এটা আমি মেনে নিতে পারিনি। অনেকটা বাধ্য হয়ে আমি সেখান থেকে বের হবার চেষ্টা করি। সুযোগ বুঝে আমি বাসায় ফিরে আসি।

ফিরে আসার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। তার দেওয়া তথ্যে র‍্যাব বৃহস্পতিবার সাতজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানায়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নিলয় বলেন, পরিবার ছেড়ে চলে যেতে হবে— তা কোনোভাবে মানতে পারিনি। যাওয়ার পরই তা বুঝতে পারি।

মানুষকে কতল করতে হবে, কথিত তাগুতকে উৎখাত বা সশস্ত্র হামলা— জঙ্গিদের এসব কার্যক্রম বিষয়ে তিনি বলেন, সশস্ত্র প্রস্তুতির কথা বারবার শুনেছি। কিন্তু আমি সেই স্টেজ (পর্যায়) পর্যন্ত যেতে পারিনি। তার আগেই ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসি।

যারা এখনো নিখোঁজ কিংবা উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরতের পথে রয়েছেন, তাদের উদ্দেশে কিছু বলার আছে কি না— জানতে চাইলে নিলয় বলেন, আমি চার-পাঁচ দিন ছিলাম। এর মধ্যেই বুঝতে পারি এটি ভুল পথ। আসলেই এটি ভুল পথ। এই ভুল পথে পা বাড়ানোর আগে বুঝে-শুনে যাওয়া উচিত। না বুঝে যাওয়া উচিত নয়। এই পথে আর যেন কেউ পা না বাড়ায়।

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া চারজনসহ সাতজনকে মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মূলত নিলয়ের জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন হোসাইন আহম্মদ, মো. নেসার উদ্দিন ওরফে উমায়ের, বনি আমিন, ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত, মো. হাসিবুল ইসলাম, রোমান শিকদার ও মো. সাবিদ।

কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ আট তরুণের মধ্যে ছিলেন শারতাজ ইসলাম নিলয়ও। গত ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি।পরিবারের হেফাজতে রেখে নিখোঁজ বাকি সাত সদস্য ও জড়িত অন্যান্যদের বিষয়ে তার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে র‌্যাব।

গত ২৩ আগস্ট সকাল ১০টায় নিলয়সহ পাঁচ তরুণ নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লা টাউন হল এলাকায় আসেন। পরে সোহেল নামে একজনের নির্দেশনায় তারা দুই ভাগ হয়ে লাকসাম রেল ক্রসিংয়ের কাছে হাউজিং স্টেট এলাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। নিলয়, সামি ও নিহাল একত্রে যাত্রা করেন। তবে তারা ভুলবশত চাঁদপুর শহর এলাকায় চলে যান।

তারা ভুল বুঝতে পেরে রাত্রিযাপনের উদ্দেশ্যে চাঁদপুরের একটি মসজিদে অবস্থান করলে কর্তব্যরত পুলিশ সন্দেহজনক আচরণের কারণে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে পুলিশ তাদের পাশের একটি হোটেলে রেখে যায় এবং পরদিন বাসায় চলে যেতে নির্দেশ দেয়।

তারা রাতে হোটেল থেকে কৌশলে পালিয়ে তাদের পূর্বনির্ধারিত স্থানে গেলে সোহেল ও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাদের লাকসামের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই বাড়িতে আগে থেকেই অবশিষ্ট তিনজন অবস্থান করছিলেন।

পরে নিলয়, নিহাল, সামি ও শিথিলকে কুমিল্লা শহরের একটি মাদ্রাসার মালিক নিয়ামত উল্লাহর কাছে পৌঁছে দেন সোহেল। নিয়ামত উল্লাহর তত্ত্বাবধানে একদিন থাকার পর সোহেল চারজনকে নিয়ে ঢাকায় আসেন এবং নিহাল, সামি ও শিথিলকে অজ্ঞাত ব্যক্তির নিকট বুঝিয়ে দিয়ে নিলয়কে লঞ্চের টিকিট কেটে দিয়ে পটুয়াখালীতে পাঠান।

গ্রেপ্তার হওয়া বনি আমিন পটুয়াখালীতে নিলয়কে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় নিয়ে যান এবং হুসাইন ও নেছার ওরফে উমায়েরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বণি আমিন নিলয়কে তিন দিন তার বাসায় রাখেন। তার বাসায় অতিথি আসায় পরে নিলয়কে হোসাইনের মাদ্রাসায় রেখে আসেন। নিলয় মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কল্যাণপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।

জেইউ/আরএইচ