বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ স্মরণসভাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও পুলিশি গ্রেপ্তারে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ২৩ বিশিষ্ট নাগরিক।

সোমবার (১০ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ পরিস্থিতির জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গ্রেপ্তারকৃত সকলের মুক্তি ও চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে আহতদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ আইন ও বিচার ব্যবস্থায় একটি বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মনে করেন তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে শহীদ আবরার ফাহাদের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত স্মরণসভায় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে ছাত্র অধিকার পরিষদের ১৫ নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেও এক্স-রে রুম ও ইমার্জেন্সি রুমে ছাত্রলীগ ফের হামলা চালিয়ে আহত অবস্থাতেই ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদেরকে পুলিশে দেয়। পরের দিন ছাত্রলীগের করা পৃথক দুটি মামলায় আহত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখায় শাহবাগ থানা এবং আদালতে উপস্থাপন করলে আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা মনে করি হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করার বদলে আহতদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে পুলিশ দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থায় একটি বাজে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি করছি এবং তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, জাবির দর্শন বিভাগের অধ্যাপক  ড. কামরুল আহসান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়্যুম, ঢাবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ ম ম আরিফ বিল্লাহ, জবির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুব হোসেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, মেজর জেনারেল (অব.) আ ম স আ আমিন।

এছাড়াও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও নাগরিক কল্যাণ ও বিকাশের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, লেখক ও গবেষক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ, লেখক ও গবেষক রাখাল রাহা, জাকারিয়া পলাশ, পিপলস অ্যাক্টিভিস্ট কোয়ালিশনের সমন্বয়ক সাকিব আলি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, এহসান মাহমুদ, গণসংস্কৃতি পরিষদের আহ্বায়ক কবি শওকত হোসেন, কবি, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট তুহিন খান।

আবরার ফাহাদের তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে গত শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে স্মরণসভার আয়োজন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। ওই সভায় হামলায় পরিষদের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে গিয়েও তারা মারধরের শিকার হন। এরপর ঢামেক হাসপাতাল থেকে নেতাকর্মীদের আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এরপর ছাত্রলীগ নেতা নাজিম উদ্দিন ও আমিনুর রহমান গত শুক্রবার রাতেই শাহবাগ থানায় ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৫ নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতনামা ১৪০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করেন। দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার সকালে ছাত্র অধিকারের ২৪ নেতা-কর্মীকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠায় শাহবাগ থানা পুলিশ। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মঙ্গলবার ছাত্র অধিকারের ২৪ নেতাকর্মীর জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

এইচআর/ওএফ