বন্ধ ঘোষিত গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনের ‘ব্যাপক অনিয়ম’ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে ৬৮৫ জনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৮ থেকে ২০ অক্টোবর স্থানীয়ভাবে এ শুনানির জন্য আদেশ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি।

গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন ৫০টি, রিটার্নিং কর্মকর্তা একটি; মোট ৫১টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে নির্বাচনের যৌক্তিকতা না থাকায় পুরো নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরপর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটির সদস্য সচিব করা হয় যুগ্ম সচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরীকে। আর সদস্য করা হয় যুগ্ম সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাসকে।

কমিটি রোববার (১৬ অক্টোবর) তিন দিনে বন্ধ ঘোষিত কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট মোট ৬৮৫ জনের শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে সময় তারিখ জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকার নির্দেশনায় দেয়।

নির্দেশনা থেকে জানা গেছে, ১৮ অক্টোবর গাইবান্ধা সার্কিট হাউজে ১১ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৬৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট (প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষ থেকে), গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা; মোট ১৩৬ জনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

১৯ অক্টোবর উপজেলা সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভা কক্ষে ৪০ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২৭৮ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২০০ জন পোলিং এজেন্ট (প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষে), সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা; মোট ৫২২ জনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া ২০ অক্টোবর গাইবান্ধা সার্কিট হাউজে পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি ও র‌্যাবের কমান্ডিং অফিসার দুইজন, রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসকসহ মোট ২৭ জনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও শুনানির প্রথম দুই দিন স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং মিডিয়া ব্যক্তিরাও উপস্থিত থাকবেন।

ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত কমিটির কার্যপরিধি

(ক) পোলিং এজেন্ট বা ভোটার ব্যতীত অন্য ব্যক্তিবর্গের গোপন কক্ষে প্রবেশ, গোপন কক্ষে ভোটদান প্রত্যক্ষীকরণ, ভোটারদের কোন প্রার্থীকে ভোটদানে বাধ্যকরণ বা প্রভাবিতকরণ, মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে গোপন কক্ষের ছবি ধারণ ইত্যাদির বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও দোষী/দায়ী ব্যক্তি চিহ্নিতকরণ;

(খ) দলীয় প্রতীক বা একই রং এর পোশাক পরিধান করে কোন কোন পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব পালন অথবা উক্তরূপ পোলিং এজেন্ট বা একইরূপ পোশাক পরিহিত ব্যক্তিবর্গ বিক্ষিপ্তভাবে ভোট কক্ষে বিচরণ, কোন কোন ক্ষেত্রে গোপন কক্ষে প্রবেশ, উল্লিখিত পোশাক উপঢৌকন বা অর্থের বিনিময়ে নেওয়া কিনা ইত্যাদি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ;

(গ) পোলিং এজেন্ট বা অবৈধ কোনো ব্যক্তি গোপন কক্ষে প্রবেশ করে নিজেই ভোটপ্রদান, ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন তা গোপন কক্ষে উঁকি দিয়ে বা ঢুকে অবলোকন করা, ভোটপ্রদানে বাধা প্রদান, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ভোট কক্ষে ঢুকে নিজেই ভোট দেওয়া বা ভোটারকে প্রভাবিত করা অথবা পোলিং এজেন্ট নয় এ ধরনের ব্যক্তি ভোটদানে ভোটারকে প্রভাবিত করার বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ;

(ঘ) নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে সকল পদক্ষেপ গ্রহণের পরেও এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটল, কারা দায়ী তা চিহ্নিত করা এবং

(ঙ) উল্লিখিত বিষয়সহ প্রাসঙ্গিক অন্য কোন বিষয় থাকলে তা পর্যালোচনাপূর্বক সুপারিশ প্রদান।

এসআর/এসকেডি