মিয়ানমারে গণহত্যা ও জাতিগত নিধন হওয়ার পরও গত কয়েক বছরে দেশটির সঙ্গে ব্রিটেনের বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধিতে বিস্মিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। যে দেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাদের সঙ্গে এত দহরম-মহরম কেন- ব্রিটেনের উদ্দেশে তিনি এমন প্রশ্ন রেখেছেন।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ড. মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ব্রিটিশ লর্ড বিলিমোরিয়া। লর্ডের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্রিটিশ সরকারকে আমরা আগেও বার বার বলেছি, ব্রিটিশ সরকার মানবাধিকারের বড় নেতা। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রে তারা জোর দেয়। কোথাও গণহত্যা ও জাতিগত নিধন দেখলে ব্রিটিশরা পছন্দ করে না। কিন্তু মিয়ানমারে জাতিগত নিধন হওয়ার পরও ২০২০ সালে মিয়ানমারে ব্রিটেনের বিনিয়োগ ছিল ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। আর গত পাঁচ বছরে ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এটি গ্রহণযোগ্য নয়।

মোমেন বলেন, আমাদের কাছে এটি তাজ্জব মনে হয়। যে দেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাদের সঙ্গে এত দহরম-মহরম কেন? আমরা মিয়ানমার থেকে ডাটা পেয়েছি, গত পাঁচ বছরে মিয়ানমারে তাদের বিনিয়োগ ১০০ পারসেন্ট বেড়েছে। তারা চার-পাঁচজন জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু ব্যবসা করেই যাচ্ছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। ৫০ বছরের সম্পর্ক। গত চার বছরে বাংলাদেশে ব্রিটেনের বিনিয়োগ ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। আরও হওয়া উচিত ছিল। কয়েক গুণ হওয়া উচিত ছিল।

মোমেন বলেন, আমরা লর্ডকে বলেছি বিষয়টি (মিয়ানমার ইস্যু)। তিনি বলেছেন, এটি জানতেন না। তিনি ওয়াদা করেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরবেন।

মিয়ানমারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিনিয়োগ নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন ড. মোমেন। তিনি বলেন, ইইউ মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছে। শতকরা ৯৮ ভাগ হচ্ছে এক্সপোর্টে। আবার সেগুলোর শিপ ফ্রি পাচ্ছে মিয়ানমার। এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। যদি সত্যি সত্যি তোমরা মানবাধিকার পছন্দ কর, তাহলে তোমাদের এ বিষয়ে সজাগ হওয়া দরকার।

সীমান্তে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নেইপিদো বেইজিংকে কোনো বার্তা দিয়েছে কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি অফিসিয়ালি আমাদের জানানো হয়নি।

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়া দরকার জানিয়ে মোমেন বলেন, আমরা সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে দুঃখের বিষয় ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত দেওয়া যায়নি। মিয়ানমার বলেছিল, তারা তাদের লোকগুলো নিয়ে যাবে। তারা বলেছিল, তারা তাদের নিরাপত্তা দেবে। তারা আমাদের কাছে অঙ্গীকার করেছে।

তিনি বলেন, এতসব বলার পরও আজ ছয় বছর একটি লোকও যেতে পারিনি। সুতরাং তাদের উচিত অঙ্গীকার ঠিক রাখা। তাদের ভেতরে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। আমরা তাদের (রোহিঙ্গাদের) পাঠাতে প্রস্তুত।

এনআই/আরএইচ