রাজধানীর প্রায় ৯৮ শতাংশ বেসরকারি স্কুলেই খেলার মাঠ নেই। এ অবস্থায় শিশুদের শারীরিক, মানসিক বিকাশ নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন তাদের অভিভাবক ও শিশুর বিকাশে কর্মরত সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, সবুজ ঘাসের মাঠ, গাছপালা আর মুক্ত বাতাসের স্বাধীনতার এই সময়টিতে শিশুদের একটু একটু করে বেড়ে ওঠার কথা। কিন্তু ইট-কাঠের দালানে ঠাসা আধুনিক শহরগুলোতে এমন সবুজের মাঠ আর মুক্ত বাতাস এখন রীতিমতো দুর্লভ হয়ে পড়েছে। এটিই বর্তমানে দেশের অধিকাংশ শিশুর যথাযথ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের প্রধান অন্তরায়।

শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর বাড্ডায় ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ড 'বাবুল্যান্ড' আয়োজিত এক সেমিনারে তারা এ শঙ্কার কথা জানান।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক জরিপের বরাত দিয়ে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকার ২ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় ২৩৫টি খেলার মাঠ আছে, কিন্তু বর্তমান জনসংখ্যার বিবেচনায় প্রয়োজন ২ হাজার ৪০০টি। শুধু তাই নয়, খেলার জায়গার অভাব ঘোচাতে বর্তমানে শিশুরা উদ্বেগজনক হারে স্মার্টফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে, যা তাদের মনস্তাত্ত্বিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

বক্তারা বলেন, শিশুরা প্রতিদিন অন্তত ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় ইন্টারনেটে কাটাচ্ছে, অল্প বয়স থেকে এমন বিঘ্নিত মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ পরে কিশোর বয়সে তাদের মধ্যে হতাশা ও আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি করতে পারে।

অনুষ্ঠানে বাবুল্যান্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইশনাদ চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরে মাত্র ২৯৪ একর খেলার মাঠ রয়েছে, যেখানে প্রয়োজন ১ হাজার ৮৭৬ একর, যা মাত্র ১৬ শতাংশ। ফলস্বরূপ প্রতিদিন ৭৭ শতাংশ শিশু পর্যাপ্ত শারীরিক ব্যায়াম থেকে বঞ্চিত হয়। যা পরে তাদের জন্য বিভিন্ন হৃদরোগ, এমনকি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বয়ে আনতে পারে।

তিনি বলেন, নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর ইনডোর প্লেগ্রাউন্ডের মাধ্যমে এই শূন্যতা পূরণ করতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে সমাজকে সহায়তায় আমাদের এই উদ্যোগ।

প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক বলেন, শিশুদের সেবা এবং সঠিক যত্ন নিশ্চিত করতে আমরা বাবুল্যান্ড সায়েন্স তৈরি করেছি। আমাদের শাখাগুলোতে রয়েছে অভিজ্ঞ 'হ্যাপি হেল্পার', যাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেবা বৃদ্ধিতে আমরা প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করি। একইসঙ্গে নিয়মিত সুপার ফোন ইভেন্ট, ভালো ভালো অভ্যাস গড়ার চর্চা, অ্যাকটিভিটি ক্লাস ইত্যাদিও এখানে আয়োজন করা হয়।

এখানে একসঙ্গে কতো সংখ্যক শিশু খেলাধুলা করতে পারবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের একটি ব্রাঞ্চে একসঙ্গে ১০০ শিশু খেলাধুলা করতে পারবে। সবমিলিয়ে দৈনিক এক হাজার শিশু এখানে খেলাধুলা করতে পারবে। এজন্য শিশুদের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা, আর অভিভাবকদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা। এর বাইরে আমাদের আর কোনো ফি নেই।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাবুল্যান্ড দেশের সবচেয়ে বড় ইনডোর প্লেগ্রাউন্ড, যেখানে প্রতি মাসে প্রায় ৪০ হাজার শিশুকে পরিষেবা দিয়ে আসছে।

আরও বলা হয়, আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে এ বছরের প্রথম আট মাসে আত্মহত্যা করা ৩৬৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৯৪ জন (৫৩.৩০ শতাংশ) স্কুলের।

সেমিনারে বক্তাদের তথ্যবহুল আলোচনার মধ্য দিয়ে উল্লেখিত সমস্যাগুলো ছাড়াও শিশুদের সুস্থ বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো এমন অন্যান্য বিভিন্ন দিক, যেমন নগরকেন্দ্রিকতা, যানজট, শব্দ দূষণ, অপরাধের হার বৃদ্ধি ও শিশুদের নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদিও প্রতীয়মান হয়ে ওঠে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নততর ভবিষ্যৎ গঠনে সবার অংশগ্রহণ কামনার মধ্য দিয়ে বাবুল্যান্ডের সেমিনারটি শেষ হয়।

প্রসঙ্গত, যান্ত্রিক শহরে কোমলমতি শিশু ও তাদের অভিভাবকদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার প্রতিজ্ঞায় দেশের সবচেয়ে বড় ইনডোর প্লেগ্রাউন্ড বাবুল্যান্ডের যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালে। তবে এটি কেবল শিশুদের খেলাধুলার জায়গাই নয়, বরং এর প্রতিটি শাখা এমনভাবে নকশা ও পরিচালনা করা হয় যাতে শিশুদের মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক বিকাশের দিকেও মনোযোগ অটুট থাকে।

বর্তমানে রাজধানীর বাড্ডা, মিরপুর, উত্তরা ও ওয়ারীতে বাবুল্যান্ডের চারটি শাখা রয়েছে এবং সম্প্রতি বাবুল্যান্ড অ্যাঞ্জেল বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে ৪০ লাখ টাকার নতুন বিনিয়োগ পেয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটিকে দেশব্যাপী তাদের সেবার মান সম্প্রসারণ করতে এবং এর ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল চালুর মাধ্যমে আনন্দকে আরও ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে।

টিআই/জেডএস