প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও সন্দ্বীপের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় প্রবেশ করবে এই ঝড়। বাংলাদেশের পুরো ৭৩০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় সিত্রাং তার তাণ্ডব দেখাতে পারে। ইতোমধ্যে সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের বেশিরভাগ জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

গত তিন বছরে যে ঘুর্ণিঝড়গুলো হয়েছে তার চেয়ে সিত্রাংয়ের আঘাত হানার এলাকা অনেক বেশি হবে বলে ধারণা করছে আবহাওয়া অফিস।

>>সারা দেশে নৌ চলাচল বন্ধের নির্দেশ

সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ ৮ নম্বর বুলেটিনে দেশের সমুদ্রবদরগুলোকে আগের ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

সিত্রাংয়ের আঘাত হানার রূপ কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার ধারণা পাওয়া যায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হানা দেওয়া তিনটি বড় ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র থেকে।

২০২১ সালের ২৬ মে ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। যার গতি ছিল ঘণ্টায় ১৬৫ কিলোমিটার। এর প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছিল ৭ জনের।

এর আগে ২০২০ সালের ১৩ মে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন আম্ফান, যার গতি ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় মৃত্যু হয় ১২৮ জনের। সেই সঙ্গে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ছিল অনেক বেশি।

>>ধেয়ে আসছে সিত্রাং, সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত

একইভাবে ২০১৯ সালের ৩ মে উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ফনি। যার প্রভাবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয় সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের ৮৯ জনের মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ ৩টি বড় ঘূর্ণিঝড়গুলোর তুলনায় সিত্রাংয়ের আঘাত হানার সম্ভাব্য এলাকার বিস্তার আরও বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে ৭৩০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকার পুরোটা জুড়েই সিত্রাং তার তাণ্ডব দেখাতে পারে।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে আঘাত হানা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়। এর গতি ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার। এটি মূলত চট্টগ্রাম ও বরিশাল উপকূলে আছড়ে পড়েছিল।

১৯৯৭ সালের ১৯ মে সীতাকুণ্ড ও এর আশপাশের এলাকায় আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে। ঘণ্টায় ২৩২ কিলোমিটার বেগের বাতাসের সঙ্গে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। 

>>খুলনায় ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বাঁধে ভাঙন

এরপর আসে ঘূর্ণিঝড় সিডর। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দেশের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় সিডর প্রায় ছয় হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। যদিও প্রাণহানির সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয় এখনও। সিডর খুলনা ও বরিশাল এলাকায় তাণ্ডব চালায়। সমুদ্র থেকে উঠে আসা ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সব কিছু ভেসে যায়। 

এরপর আসে ঘূর্ণিঝড় আইলা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনা উপকূলে ২০০৯ ‍সালে ২৫ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। এই ঘূর্ণিঝড় ভারতের ১৪৯ জন ও বাংলাদেশের ১৯৩ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে উপকূলে প্রায় তিন লাখ মানুষ গৃহহীন হয়।

পরের ঘূর্ণিঝড় মহাসেন ২০১৩ সালের ১৬ মে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে। এটির বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। এই ঝড় বাংলাদেশে ১৭ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়।

>>সিত্রাং : প্রধানমন্ত্রীর ২৬ অক্টোবরের অনুষ্ঠান স্থগিত

ঘূর্ণিঝড় কোমেন- ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আঘাত হানে। বাতাসের গতি ছিল ৬৫ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু যা ২০১৬ সালে ২১ মে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে এবং ভারতে আংশিক অঞ্চলে আঘাত হানে।

ঘূর্ণিঝড় মোরা- উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরা ২০১৭ সালের ৩০ মে ১৪৬ কিলোমিটার বাতাসের গতিতে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে।

ঘূর্ণিঝড় ফণী- ২০১৯ ‍সালের ৩ মে আঘাত হানে। বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে বাংলাদেশে নয় জনের মৃত্যু হয়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বারবার দিক বদল করে ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানে। পর স্থলভাগ দিয়ে বাংলাদেশে আসায় ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কার চেয়ে কম হয়। ঝড়ে মারা যায় ২৪ জন। 

এর পরে গত ২০২০ সালের ১৩ মে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন আম্ফান, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় মৃত্যু হয় হয় ১২৮ জনের। সেই সঙ্গে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ছিল অনেক বেশি। পরে ২০২১ সালের ২৬ মে ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। যার গতি বেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬৫ কিলোমিটার এর প্রভাবে এসে বাংলাদেশেও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এই ঘূর্ণিঝড়।

>>নোয়াখালীতে সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল

এএসএস/এমএ