মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার জন্য দেশে এসেছিলেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাত হোসেন মজুমদার। কিন্তু পরিবারের কাছে ফেরাটা তার শুভ হয়নি। শনিবার রাতে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে পড়েছিল তার রক্তাক্ত মরদেহ। ওই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়। ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও দায়ী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ধানমন্ডি থানা পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার সময় লোডশেডিংয়ের কারণে পুরো এলাকা অন্ধকার ছিল। এই কারণে ঘটনাস্থলের ফুটেজ থেকে আমলযোগ্য স্থিরচিত্র বিশ্লেষণ করা যায়নি। তবে আশপাশের এলাকার অর্ধশত সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন ১০ থেকে ১২ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

শনিবার (২২ অক্টোবর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ধানমন্ডির লেকপাড় থেকে শাহাদাত হোসেন মজুমদারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায়  প্রথমে ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাতের মৃত্যুর কারণ নিয়ে দ্বিধায় থাকলেও সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের পর পুলিশ বলছে, এটি ‘স্পষ্ট খুন’। পুলিশের ধারণা, দুর্বৃত্তের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন তিনি।

ছিনতাইকারীদের হাতে খুন সন্দেহে চলছে তদন্ত

যোগাযোগ করা হলে ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহত শাহাদাতের স্ত্রীর বড় ভাই ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা (মামলা নম্বর-১৮) দায়ের করেছেন। মামলার পর সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের প্রাথমিক বিবরণী সূত্রে এটি যে খুন ছিল— তা স্পষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, ওই ঘটনায় আমরা সম্ভাব্য ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করছি। তবে সবগুলোই অন্ধকার এসেছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি ঘটনার সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় লোডশেডিং চলছিল। যে কারণে সিসি ক্যামেরায় বিশেষ কিছু দেখা যায়নি।

ওসি বলেন, আমরা আশপাশের এলাকার বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি। তাদের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশা করছি দুই-এক দিনের মধ্যে ভালো সংবাদ দিতে পারব।

যোগাযোগ করা হলে রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাত হোসেন মজুমদার খুনের ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ছিনতাইকারীদের হাতেই খুনের ঘটনা, নাকি নেপথ্যে অন্য কারো হাত ছিল তা এখনো স্পষ্ট নয়। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। ভাল সংবাদ দিতে আমরা সময় নিচ্ছি। আশা করছি, কাল পরশুর মধ্যে এই মামলা সলভ হয়ে যাবে।

রমনা গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজন আটক রয়েছেন। থানা পুলিশ তাদের আটক করেছে। সংশ্লিষ্টতা, খুনের মোটিভসহ সার্বিক তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বেল্লাল হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অভিযানে আছি, কাজ করছি। সুখবর আছে। বাকিটা সিনিয়ররা বলবেন।

খুনের ঘটনার পর যোগাযোগ করা হলে নিহত শাহাদাত হোসেনের ভাতিজা শোয়াইব মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার চাচাতো বোনের এসএসসি পরীক্ষার জন্য চাচা বিদেশ থেকে দেশে আসেন। এক মাসের মধ্যে চাচার আবার দেশের বাইরে চলে যাওয়ার কথা ছিল। প্রতিদিনই চাচা রাত ৮টা বা সাড়ে ৮টায় হাঁটাহাঁটি করার জন্য ধানমন্ডি লেকে যেতেন। বাসায় ফিরতেন রাত সাড়ে ১১টা বা ১২টায়। কিন্তু ওই রাতে চাচা বাসায় না ফেরায় তার পরিবার থেকে আমার বাবাকে ফোন করা হয়। এরপর চাচির ভাইকেও ফোন করা হয়। পরে খবর পাই, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে একটি মরদেহ পড়ে আছে। মোবাইলে ছবি পাঠালে চাচার মরদেহ শনাক্ত করা হয়। আমার চাচা ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন।

শোয়াইব আরও জানান, তার চাচা কলাবাগান থানার ১৯ নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসার চার তলায় থাকতেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। 

ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাতের স্ত্রীর বড় ভাই আনোয়ারুল আজম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, থানা পুলিশ সূত্রে জানতে পেরেছি খুনের ঘটনায় পাঁচজন আটক আছে। আপাতত পুলিশ গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে না। জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পাঁচজনই ছিনতাইকারী বলে জেনেছি।

জেইউ/আরএইচ