সমতা-নারীর অধিকার প্রশ্নে বদলাতে হবে পুরুষদের মনোভাব
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এখনো অনেক বাধা আছে। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে তরুণদের সমতার দৃষ্টি গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা বদলে নারীর প্রতি অন্যায় ও বৈষম্যের প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক পক্ষ উপলক্ষে সোমবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে সংগঠনের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘নারী অধিকার : তরুণের ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
বিজ্ঞাপন
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সভায় উপস্থিত তরুণদের মধ্যে আলোচনা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আমিনা বাশার অনি, ঢাবির পপুলেশন সাইন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিদ আল আজোয়াদ, জর্জ কোর্টের অ্যাডভোকেট কাকলী মৃধা, সংগীতশিল্পী সংগীতা ইমাম, নিউজ প্রেজেন্টার ও অভিনেত্রী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত জিনাত রেহানা, ঢাবির ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাজিদ তামজিদ, সাফ গেমসে সাতারে প্রথম স্বর্ণ বিজয়ী মাহফুজা খাতুন শিলা, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থী নিথি, সংগঠক (গ্রিন ভয়েজ) মনসুরা তৃপ্তি, ঢাবি শিক্ষার্থী আহসান হাবীব, কন্টেন্ট রাইটার ফারজানা আফরোজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সংগীতা আহমেদ, ঢাকা ওয়াইডব্লিউসিএয়ের প্রতিনিধি সুমনা, ঢাবি শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান অথৈ ও শিক্ষার্থী নাফিজা ইসলাম সেতু।
স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ৫২ বছর কাজ করছে। নারীর অধিকার আদায়ে বিশ্বব্যাপী লড়াই চলছে। কেননা যুগ যুগ ধরে সভ্যতার বিকাশ হলেও অর্ধেক জনগোষ্ঠীর নারীকে অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা এখনো পিছিয়ে। দীর্ঘ নারী আন্দোলনের ফলে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারী পুরুষের সমতা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আজকের পরিবারে সমাজে, কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান, জীবনযাত্রা, অংশীদারিত্বের, সমতা-মর্যাদার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে তা তরুণ প্রজন্ম কিভাবে দেখছে তা আলোচনার উদ্দেশ্যে আজকের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। কেননা তরুণদের হাত ধরে আগামী দিনের নারী আন্দোলনের অগ্রসর করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, একবিংশ শতাব্দীর প্রায় এক চতুর্থাংশ অতিক্রান্ত হয়েছে। বৈশ্বিকভাবে নারীর অধিকার স্বীকৃত হয়েছে, অনেক আইন হয়েছে। অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এখনও অনেক বাধা আছে। সমাজ সম্পর্কের নতুনভাবে অধস্তনতার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে তরুণদের সমতার দৃষ্টি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সভায় অংশ নেওয়া তরুণ বক্তারা বলেন, নারী নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। নারী অধিকার নিয়ে আজও আন্দোলন করে যেতে হচ্ছে। যার সূচনা হয় বেগম রোকেয়ার হাত ধরে। অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক শিক্ষার সব পর্যায়ে নারীরা নিজ নিজ জায়গায় সফল হলেও নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলন এখনো চলমান। পরিবারে বা সমাজে নারীর প্রতি আচরণ ভিন্ন রকম।
সহিংসতার জন্য নারীকে দোষারোপ করার মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, এখন নারীরা নেতৃত্ব পর্যায়ে কাজ করতে পারছেন। এটি আগামীর জন্য শুভবার্তা। তবে উল্টো পিঠ আছে। এমন যেন না হয় বাসায় অল্পবয়সী কাজের মেয়ে আছে। জাস্টিস, ইক্যুয়ালিটির জায়গা যেন সবাই বুঝতে পারে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো নারীরা বৈষম্যের শিকার। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব দ্বারা নারীদের অবদমিত করে রাখা হয়।
অন্যদিকে ১৫-১৬ বছর আগে খেলাধুলায় নারীদের উপস্থিতি তেমন ছিল না। নানা সামাজিক পারিবারিক বাধা ছিল। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে নিজেদের প্রচেষ্টার কারণে এবং বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার কারণে। তবে অভ্যন্তরীণ পরিবেশে নারী খেলোয়াড়রা নানা হয়রানির শিকার হয়। এখন অনলাইন ইউটিউব, সোশাল মিডিয়া, প্ল্যাটফর্মে নারীদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। নারীকে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে। গণমাধ্যমে নারীকে অবমূল্যায়ন করা হয়। এসব জায়গায় নারী সংগঠনগুলোকে সোচ্চার হতে হবে; প্রত্যেক মেয়েকে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, গণমানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। নারীকে স্বাবলম্বী হতে হবে। প্রত্যেক তরুণকে নিজ নিজ জায়গা থেকে
নারীর প্রতি অন্যায় ও বৈষম্যের প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে। পুরুষদেরও মনোভাবের পরিবর্তন করতে হবে। নারীকে সন্তান পালনের পাশাপাশি নিজেকেও প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। নারী জন্মগতভাবেই অধিকার নিয়ে এসেছে, সেই অধিকার আত্মবিশ্বাসের সাথে যোগ্যতা নিয়ে তৈরি করতে হবে। নারী অধিকার হিসেবে প্রতিবাদ করতে গিয়ে গণবিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। নারী ও পুরুষকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে হবে। নারীদের কথা বলার চর্চা ও বোধের চর্চা জাগ্রত করতে হবে। নারী অধিকারের চর্চা পরিবারেও করতে হবে।
জেইউ/আরএইচ