৭৭ সালের ঘটনার বিচারের দাবি ‘মায়ের কান্না’র
বিদ্রোহ দমনের নামে ১৯৭৭ সালে সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছে ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠন। ভুক্তভোগী সেনা ও বিমান বাহিনীর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত, চাকরিচ্যুত এবং ফাঁসির আদেশ পাওয়া সদস্যদের স্বজনরা সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
সংগঠনটি দাবি করছে, তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা পোক্ত করতে বিদ্রোহের নাটক সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা অফিসার এবং নন কমিশন অফিসারদের তখন অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড এবং চাকরিচ্যুত করা হয়।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় সংগঠনটি। পরে সংগঠনটির পক্ষ থেকে সেখানে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে বিচারের দাবি জানানো হয়।
এসময়, সংগঠনটির সদস্য কামরুজ্জামান মিয়া লেলিন বলেন, আমার বাবা সার্জেন্ট সাইদুর রহমান মিয়াকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। শত শত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ১৯৭৭ সালে বিনা কারণে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে আদালতে এ বিষয়ে একটি রিট করেছিলাম। রিটে আমরা পাঁচজনকে আসামি করেছিলাম। তৎকালীন সময়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও তখনকার সেনাপ্রধান এবং বিমানবাহিনী প্রধানের বিরুদ্ধে আমরা আদালতে অভিযোগ করেছিলাম। এ বিষয়ে ২০২২ সালে আদালত একটি রুল জারি করেছেন। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, মামলাটি যেন দ্রুত সম্পন্ন হয়। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা যেন বিচার পায়।
সংগঠনটির আরেক সদস্য ১৯৭৭ সালে নির্দোষ হয়েও অন্যায়ভাবে সাজাপ্রাপ্ত ভিক্টিমের সন্তান রোমেল কায়েস বলেন, আমার বাবা মো. রুহুল আমিন তৎকালীন সময় বিমান বাহিনীতে নন-কমিশন্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার হিসেবে পদন্নোতি পাওয়ার আগেই ১৯৭৭ সালে তাকে অন্যায়ভাবে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। তৎকালীন সময় জিয়াউর রহমানের নির্দেশে তখন অজস্র নির্দোষ সেনা ও বিমান বাহিনীর নন-কমিশন্ড ও জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারদের বিচারের নামে প্রহসন করে নির্বিচারে ফাঁসি দেওয়া হয়, কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সময় যাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসির আদেশ বা কারাদণ্ড কিংবা চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, তারা যে নির্দোষ সেটি যেন বিচার কার্যের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। রাষ্ট্র যেন তাদের প্রাপ্য সর্বোচ্চ র্যাংক দিয়ে যথাযথ সম্মান প্রদান করে, দেশপ্রেমিক হিসেবে ভূষিত করে তালিকা প্রকাশ করে। এছাড়াও তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে এবং চাকরিতে থাকাকালীন সময় তারা যে পেনশন, বেতন, ভাতা, রেশনসহ যাবতীয় সকল পেতেন সেটা যেন বর্তমান সরকার যেন পে-স্কেল অনুযায়ী ভুক্তভোগী সকল পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়।
বিগত ৪৫ বছর যাবৎ সুবিচারের অপেক্ষারত সকল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটাই আমাদের দাবি।
এমএসি/এমএইচএস