‘জাতীয় চার নেতাকে হত্যা দেশের পুনর্গঠন বাধাগ্রস্ত করেছে’
জেলহত্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি জঘন্যতম অধ্যায়। কেননা এখানে তাদেরকেই হত্যা করা হয়েছে যারা ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম রূপকার। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ড. কুদ্দুস সিকদার বলেন, বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে এ চার নেতাই তার চিন্তা চেতনাকে ধারণ করে দেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুতরাং যাদের হত্যা করা হয়েছিল তারা শুধু উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন বা রাজনীতিবিদ ছিলেন বিষয়টাকে এমনভাবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। কারণ এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা অনেক গভীর ছিল আর ক্ষতিটাও হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি।
আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা জাতীয় চার নেতাকে হত্যা এবং পরবর্তীতে ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র একই সূত্রে গাঁথা। ১৫ আগস্ট ছোট্ট শেখ রাসেলকেও ছাড়া হয়নি। এসব ঘটনা আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই। এসব ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ওই জেনারেশন থেকে কেউ যেন স্বাধীনতার চেতনার জায়গা পুনর্গঠিত করতে না পারে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, জেল হত্যার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট বুঝা যায় এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কেননা কারাগার হচ্ছে বন্দিদের জন্য নিরাপদ স্থান। পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যাবে না এ রকম পরিকল্পিতভাবে কারাগারে ঢুকে বন্দিদের হত্যা করা হয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী সশস্ত্র অবস্থায় প্রবেশের সুযোগ নেই। এখানে সিদ্ধান্তই ছিল যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এমন কোনো পরিস্থিতি যদি হয় যে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় চলে আসতে পারে তাহলে যারাই এর সঙ্গে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদের শেষ করতে হবে। মূলত আওয়ামী লীগের পুনর্গঠিত হওয়ার জন্য নেতৃত্ব দিতে পারবেন এই বিবেচনায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল।
এই বর্বরোচিত ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশের উপর প্রভাব ফেলবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল।
এরপর আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগের নেতাদেরও কারাগারে ঢোকানো হয়েছে, কাউকে হত্যা করা হয়েছে, কাউকে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়েছে। এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়, একটি অংশের আনুগত্য তৈরি করাতে লোভ লালসাও দেখানো হয়েছে। অনেকেই সেই ফাঁদে পা দিয়েছেন।
সবমিলিয়ে জেল হত্যাকাণ্ডকে শুধু মাত্র চারজন নেতার মৃত্যু বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। এটি এদেশের স্বাধীনতার ধারাবাহিকতা এবং দেশকে পুনর্গঠন বাধাগ্রস্ত করতে একটি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্রের অংশ।
আরএইচটি/এসকেডি