পিরোজপুরে কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মামুন হাওলাদারকে দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুনের ঘটনার প্রধান আসামি গাজী সিদ্দিকুর রহমানকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩)।

শুক্রবার (৪ নভেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, ইউপি সদস্য মামুনের সঙ্গে গ্রেফতার সিদ্দিকুর, তার ভাই কামাল ও ভাতিজা আসাদুলের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডাও হয়। সেই শত্রুতার জেরে সিদ্দিকুরের নেতৃত্বে মামুনকে খুন করা হয়।

শনিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, গত ৩১ অক্টোবর সকালে ইউপি সদস্য মামুন হাওলাদারকে কুপিয়ে বাম পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে, শরীর ও মুখমণ্ডল ক্ষত-বিক্ষত করে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। এ ঘটনায় সিদ্দিকুর রহমানকে প্রধান আসামি করে আরও ১০ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে ভান্ডারিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় গোয়েন্দা নজরদারির প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা এলাকা থেকে সিদ্দিকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিদ্দিকুরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ভিকটিম মামুন হাওলাদার একজন ব্যবসায়ী এবং শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য। তার সঙ্গে গ্রেফতার সিদ্দিকুর, তার ভাই কামাল এবং ভাতিজা আসাদুলের দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। ২০১১ সালে মামুনের এক আত্মীয়কে ধর্ষণের দায়ে সিদ্দিকুরের ভাই কামাল ও তার ভাতিজা আসাদুল গ্রেপ্তার হয়।

পরে জামিনে মুক্ত হয়ে তারা মামুনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের পরিকল্পনা শুরু করেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শত্রুতার জেরে মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

এই র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত ৩১ অক্টোবর সকালে পরিকল্পনা অনুযায়ী সজল জমাদ্দার মামুনকে ইউনিয়ন পরিষদে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তার মোটরসাইকেলে ওঠান এবং সিদ্দিকুরকে জানান। পরে নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছালে সিদ্দিকুরের নির্দেশে কামাল, আসাদুল ও অন্যরা রাস্তায় গাছ ফেলে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে মামুনের ওপর হামলা চালায়।

এ সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মোটরসাইকেল চালক সজলকে পিটিয়ে আহত করা হয়, যাতে কেউ তাদের সন্দেহ না করে। এর মধ্যে মামুনের মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল থেকে জড়িতরা পালিয়ে যায়।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া সিদ্দিকুর ঘটনার পরপরই পালিয়ে প্রথমে পিরোজপুর এবং পরে ঢাকার ফকিরাপুল এলাকায় আত্মগোপন করেন। এরপর তিনি অবস্থান পরিবর্তন করে নারায়ণগঞ্জ সদর এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন।

গ্রেপ্তার হওয়া মামুনের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি এবং অস্ত্র মামলাসহ প্রায় ১০টি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় তিনি একাধিকবার কারাভোগ করেছেন বলেও প্রাথমিকভাবে জানা গেছে— জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

এমএসি/কেএ