মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার স্থাপনে ছাদ ভাড়া ও জাপানি কোম্পানি টয়োটা গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা নির্মাণের জন্য জমি কেনার কথা বলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের মূলহোতা মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তার পেনশনের ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পল্লবী থানায় করা মামলায় পিবিআই ঢাকা মেট্রো-উত্তরের একটি দল শুক্রবার (১১ নভেম্বর) রাতে পল্লবী থানার মিরপুর-১২ ঝিলপাড় এলাকার একটি বাসা থেকে আমিনুলকে গ্রেপ্তার করে। 

গ্রেপ্তার আমিনুল ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার জাদবপুর ইউনিয়নের সোনাইডাঙ্গার মৃত মেছের আলী বেপারীর ছেলে। 

শনিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে পিবিআই ঢাকা মেট্রো-উত্তর-এর বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভুক্তভোগী মো. শাহজাহান (৬০) একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। তিনি আশুলিয়ায় একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন। গত ২৬ অক্টোবর দুপুরে সায়মান পরিচয় দিয়ে মামলার একজন আসামি শাহজাহানের সঙ্গে পরিচিত হন। 

সায়মান জানান, তিনি এসবি ইন্টারন্যাশনাল কো. লি.-এ চাকরি করেন। তাদের প্রতিষ্ঠানের টাওয়ার নির্মাণের জন্য ভুক্তভোগীর নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের ছাদ ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাব করেন এবং তার প্রতিষ্ঠানের এমডি মাসুদুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

আরও পড়ুন : স্কয়ার-ইনসেপ্টার নামে নকল ওষুধ বিক্রি করতেন রানা

পরে এমডির অফিসের স্টাফ তার নাম জাহাঙ্গীর আলম পরিচয় দিয়ে শাহজাহানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে গত ২ নভেম্বর ভিকটিম শাহজাহান ঢাকার পল্লবী থানার মিরপুর-১২ এলাকায় তাদের ফ্ল্যাট বাসায় যান। সেখানে তাদের প্রতিষ্ঠান এসবি ইন্টারন্যাশনাল কো লি. এর এমডি মাসুদুর রহমান ওরফে কামালসহ কয়েকজন বসে ভুক্তভোগী শাহজাহানের বিল্ডিংয়ের ছাদ ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কথা বলেন। বাড়ির দলিল, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং দুই কপি ছবি নিয়ে অফিসে আসতে বলেন। 

৫ নভেম্বর পল্লবী থানাধীন ১২ নম্বরে এলে গ্রেপ্তার আমিনুল ইসলাম অফিস কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে টাওয়ার নির্মাণের চুক্তির বিষয়ে আলোচনা না করে নতুন ব্যবসার কথা বলেন। মাসুদুর রহমান জানান, তার বেয়াই মাহবুবুর রহমান জাপানি টয়োটা কোম্পানিতে উচ্চ পদে চাকরি করেন। জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি করতে সোনারগাঁও মুরগা পাড়া এলাকায় ইন্ডাস্ট্রির জন্য ২.৬৫ একর জমি নির্বাচন করেছে। জমিটি আসামি মাহাবুবুর রহমানের নামে ব্যতীত অন্য কারো নামে বায়না নামা দলিল করলে অধিক টাকা কোম্পানি থেকে আদায় করতে পারবেন। এতে সবাই লাভবান হবেন।

ভুক্তভোগী শাহজাহানকে ৫০ লাখ টাকা দিলে এক কোটি টাকা পাবেন বলে প্রলুব্ধ করে জমির বায়না নামা দলিল করতে বলেন। বিষয়টি খুবই গোপনীয় ও অন্যরা জেনে গেলে এই ব্যবসা করা সম্ভব হবে না বলে এক গ্লাস পানিতে আঙ্গুল চুবিয়ে সবাইকে শপথ করান।

একপর্যায়ে মাসুদুর রহমান জমির মালিক সাজিয়ে আসামি মোস্তফাকে ডাকেন। তখন আসামি মোস্তফা এসে জানান, তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। তাকে চিকিৎসা করানোর জন্য দ্রুত সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিতে হবে। সেখানে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। তার কাছে নগদ টাকা না থাকায় তিনি কম দামে জমি বিক্রি করছেন। জমির মোট মূল্য ২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা নির্ধারণ করে বায়না বাবদ দুই কোটি টাকা উল্লেখ করে ভুক্তভোগীর সঙ্গে চুক্তি করেন।

বায়না নামায় দুই কোটি টাকা উল্লেখ করলেও জমির মালিক আসামি মোস্তফাকে ৫০ রাখ টাকা পরিশোধের প্রস্তাব করা হলে ভুক্তভোগী জানান, ৫০ লাখ তিনি দিতে পারবেন না, পরে ১৫ লাখে দফারফা হয়।

গত ৬ নভেম্বর ইসলামী ব্যাংক পল্লবী শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে আসামি আমিনুল ইসলামের বাসায় যায়। সেখানে মাসুদুর রহমান ওরফে কামাল (৫০), মোস্তফা (৪৮), মাহবুবুর রহমান (৪০) ও সায়মন (৩০) ভিকটিম শাহজাহানের সুকৌশলে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে নেন ও আরও ১০ লাখ টাকা দিতে বলেন। সন্দেহ হওয়ায় ভুক্তভোগী শাহজাহান বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন ফাঁদে পড়েছেন তিনি।

তখন তিনি গত ৯ নভেম্বর পিবিআই ঢাকা মেট্রো-উত্তর অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। 

বিশেষ পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। ভিকটিম শাহজাহানকে পল্লবী থানায় মামলা করতে বলা হয়। মামলার পর প্রতারক চক্রের মূলহোতা আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়। 

গ্রেপ্তার আমিনুলকে সোপর্দ করা হলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই ঘটনায় পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। 

প্রলোভনে পড়ে পেনশনের টাকা হারানো বৃদ্ধ শাহজাহান বলেন, আমি এই টাকা ফেরত চাই। আমি নিজের বাসায় থাকতে পারছি না, ঘুমাতে পারছি না। নির্মাণাধীন বাসার কাজও শেষ করতে পারছি না। চক্রের ফাঁদে পড়ে আমার সর্বস্ব হারানোর দশা।

জেইউ/এসএসএইচ