নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, সরকারের সহায়তা নিয়েই আমরা আরপিও সংশোধন বা আইনের সংস্কার শেষ করতে পারব। তবে সরকারের সহায়তা না পেলে আমাদের সর্বশেষ ভরসাস্থল রাষ্ট্রপতি। তখন আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে বলতে পারব, এই জায়গাটায় আটকে আছি আপনি কিছু করেন। তবে রাষ্ট্রপতির বিষয়টি আমরা এখনো চিন্তা করছি না।

রোববার (১৩ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আরপিও সংশোধন বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যস্ততার জন্য বা বিভিন্ন কারণে হয়ত আরপিও সংশোধনীতে একটু দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। আমার ধারণা অচিরেই সরকারের তরফ থেকে একটা ফলাফল পাব। আইন সংশোধন হলে আমরা যেটা চেয়েছি হয়ত আমাদের কাজটা আর একটু সহজ হতো। আইনের বিধানেই গাইবান্ধার নির্বাচনটা বন্ধ হয়েছে। আমার মনে হয় না সরকার আইন প্রয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সরকারের সহায়তা নিয়েই আমরা আইনের সংস্কার শেষ করতে পারব। না হলে আমাদের সর্বশেষ ভরসা মহামান্য রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির কাছে আমরা বলতে পারব এই জায়গায় আটকে আছি আপনি কিছু করেন। সেটা আমরা এখনো চিন্তা করছি না।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের দায়িত্বকাল সাড়ে আট মাস হচ্ছে। সাড়ে আট মাসে কোনো রকম চাপ, অসহযোগিতা আমরা পাইনি। সরকারের কাছ থেকে আমরা সহযোগিতামূলক আচরণ পেয়ে আসছি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চাপ অনুভব করছি না। বিরোধী দলকে আমরা কিন্তু সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছি তাদের বলছি আপনারা আপনাদের এক্সপার্টদের নিয়ে আসেন। ইভিএম পরীক্ষা করেন। কিন্তু তারা আসেননি।

সাড়ে আট মাসে আপনাদের প্রতি বিরোধী দলের কি আস্থা বেড়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আনিছুর বলেন, সেটা আপনারা ভালো বলতে পারবেন। আপনাদের সঙ্গে সরকার এবং বিরোধী দল উভয় পক্ষের ইন্টারেকশন বেশি হয়। আমরা সরাসরি বিরোধী পক্ষের কাছে যেতে পারছি না সীমাবদ্ধতার জন্য।

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা ১৪৫টি ভোটকেন্দ্র সম্পর্কে তদন্ত করতে বলেছি। একই তদন্ত কমিটি কাজ করছে, আগামীকাল তারা কমিশনে রিপোর্ট জমা দেবে। রিপোর্ট দেখে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।

সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সবাই আশাবাদী সব দল নির্বাচনে আসবে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়। সময় অনেক কিছু বলে দেবে। আমাদের একটাই চ্যালেঞ্জ যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। আমরা সফল হব কী-না জানি না, তবে আমাদের শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা থাকবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য এসেছি, কোনো দলের রেফারি হিসেবে কাজ করব না। আমরা সব দলের রেফারি হিসেবে থাকব। বিএনপি নির্বাচনে আসবে না, আমরা এটা বিশ্বাস করি না। বিএনপি নির্বাচনে অবশ্যই আসবে। নির্বাচনের এখনও প্রায় ১৪ মাস সময় বাকি আছে। তখন হয়ত পরিস্থিতি পরিবর্তনও হতে পারে। এখনই সে সম্পর্কে সবকিছু বলা যাচ্ছে না।

নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ইভিএম ক্রয়ের প্রস্তাবটি প্ল্যানিং কমিশন থেকে ফেরত এসেছে। যতটুকু শুনেছি টেকনিক্যাল কমিটির স্বাক্ষরিত কাগজ চেয়েছিল। তারা গত সপ্তাহে এটা নিয়ে বসেছিল। তবে থমকে যাওয়া না বা বাস্তবায়নের এখনো যথেষ্ট সময় আছে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়েও যদি প্রকল্প অনুমোদিত হয় তাহলে কোন সমস্যা হবে না। 

তিনি বলেন, আগের ইভিএমগুলো সংরক্ষণাগার না থাকায় বেশ কিছু ইভিএম অকেজো হয়ে গেছে। সেগুলো রিপেয়ারিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। সংরক্ষণের জন্য ১০টি রিজিওনে ১০টি ওয়্যারহাউজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী সরকার এটার অনুমোদন দেবে।

জানুয়ারির মধ্যে যদি না হয় তাহলে ৪৫০ আসনে কি ইভিএমে ভোট করা সম্ভব হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে যেটুকু আমাদের হাতে আছে সেটা নিয়েই আমরা নির্বাচন করব। জটিলতা আমরা বলবো না। সরকার প্রক্রিয়া একটু লম্বা হয়।

এসআর/এসকেডি