মুনিজা কবির ও সাকিফ আলম। দুজনই আইনে বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রিধারী। ছোটবেলা থেকেই তুখোড় মেধাবী মুনিজা ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টারি করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে লেকচারার (প্রভাষক) হিসেবে যোগ দেন। অন্যদিকে, কানাডা থেকে আইনে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে সাকিফ আলমও একই ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে গিয়ে দুজনের মধ্যে পরিচয়। পরিচয় থেকে ভালোলাগা, ভালবাসা, অতঃপর বিয়ে। ‘ধর্ষকদের’ আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করোনার সুপ্ত বাসনা নিয়ে ব্যারিস্টার হওয়া মুনিজা শিক্ষকতার পাশাপাশি উচ্চ আদালতে প্র্যাকটিসও করতে চান। অন্যদিকে, ক্যান্টনমেন্টের সুশৃঙ্খল পরিবেশে বেড়ে ওঠা সাকিফ আলম সমাজের মানুষকে আইন বিষয়ে সচেতন করতে এবং আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ করতে ভূমিকা রাখতে চান। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এডুকেশন ফান্ড গঠন করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য  স্কলারশিপেরও প্রবর্তন করতে চান।

ব্যবসায়ী বাবার মেয়ে মুনিজা ভবিষ্যতে এনজিও প্রতিষ্ঠা করে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান। সফল এ দম্পতি তাদের জীবনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ডালিম।

পারিবারিক পরিচয়

ব্যারিস্টার মুনিজা কবির : গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী হলেও জন্ম ঢাকায়। বেড়ে ওঠা, পড়ালেখা সবই ঢাকায়। বাবা শাহজাহান কবির। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে পলিটিকসের (রাজনীতি) পাশাপাশি ব্যবসা করতে দেখেছেন। উভয় ক্ষেত্রেই সফল ছিলেন। তবে মুনিজার মায়ের রাজনীতি একদমই পছন্দের ছিল না। পরিবারের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে অনেক আগেই রাজনীতি ছাড়েন বাবা। এখন তিনি সফল ব্যবসায়ী। মা স্যানিডেল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের টিচার ছিলেন। এখন তিনি পুরোপুরি গৃহ ব্যবস্থাপক। মুনিজার এক বড় বোন ও ছোট ভাই আছেন। বড় বোন মেকআপ আর্টিস্ট। ‘গ্লামার বিটস বাই রাবিতা’ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ছোট ভাই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে অধ্যয়নরত।

সাকিফ আলম : গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাঘায়। জন্ম ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। বাবা সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ছিলেন। ২০১০ সালে অবসর নেন। আছে দুই ভাই। বড় ভাই পরিবারসহ কানাডায় থাকেন। বাবার চাকরির সুবাদে ছোটবেলা থেকেই এখানে-ওখানে ছুটে চলা। ঢাকায় জন্ম হলেও সিলেটে কাটে টানা সাত বছর। বাবার পোস্টিংয়ের সুবাদে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে চার বছরের বেশি সময় পার করার পর দেশে ফিরে আসেন। এরপর আইনশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পাড়ি জমান কানাডায়। 

ব্যারিস্টার মুনিজা কবির ও সাকিফ আলম | ছবি- ঢাকা পোস্ট

ঢাকা পোস্ট : দুরন্ত শৈশব-কৈশোর পার করে আইনশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এখন দুজনই শিক্ষকতা পেশায়। অতীতের সুখস্মৃতি সম্পর্কে যদি বলতেন… 

ব্যারিস্টার মুনিজা কবির : আমার স্কুল ছিল স্যানিডেল। স্যানিডেল থেকে ও লেভেল করি। তারপর মাস্টার মাইন্ডে ভর্তি হই। সেখান থেকে এ লেভেল সম্পন্ন করি। একটি মজার বিষয় হলো, আমি কিন্তু সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের। আমার এ লেভেলে সাবজেক্ট ছিল-বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, ম্যাথম্যাটিক্স। এগুলোর সঙ্গে আমি ইচ্ছা করেই ল’ নিলাম। কিন্তু এটাই যে আমার ডেসটিনেশন (গন্তব্য), আমার প্রফেশন (পেশা) হয়ে যাবে তখন বুঝতে পারিনি। 

এ লেভেল পাস করার পর চিন্তা করলাম বাংলাদেশের কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়ব, বাংলায় ল’ পড়ব নাকি ইংলিশে? আম্মু বলল, তুমি কী হতে চাও? আমি বললাম, ব্যারিস্টার হতে চাই। ব্যারিস্টার হতে হলে আমাকে ইংলিশ ল’ পড়তে হবে। তখন আমি বাইরের ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করলাম। লন্ডন কলেজ অব ইকোনোমিক্সে চান্স পেলাম। 

বাবা চিন্তা করলেন মেয়েটা অনেক ছোট। ও বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে না। বাবা বলল, আপাতত দেশেই পড়। আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বাবার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। এক সপ্তাহ কোনো কথা বলিনি। এর মধ্যে আমি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামের কথা শুনতে পেলাম। দেশে বসেই ইউকেতে ল’ পড়তে পারি। আমি খালেদ হামিদ চৌধুরী সারের লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজে (এলসিএলএস) ভর্তি হলাম। সেখানে ব্যারিস্টার খালেদ হামিদ সার, ব্যারিস্টার সাফায়েত উল্লাহ, ব্যারিস্টার আসিফ বিন আনোয়ারের মতো এক্সিলেন্ট টিচার পেলাম। 

দেশে বসে গ্রাজুয়েট করার পর আমি বার করার জন্য আবেদন করলাম। সবচেয়ে ভালো সিটি ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেলাম। এরপর লন্ডন চলে যাই। ওখানে গিয়ে বার করলাম। তারপর কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে মাস্টার্স করে দেশে ফিরে এলাম। দেশে ফিরে ব্লাস্ট, ব্যারিস্টার আখতার ইমাম অ্যাসোসিয়েটসে কাজ করেছি। এখন নর্থ সাউথে শিক্ষকতা করছি। শিক্ষকতার পাশাপাশি আইনের পেশাও চালিয়ে যাব।

সাকিফ আলম : সিলেটের কিশলয় নামে একটি স্কুলে শিক্ষার হাতেখড়ি। ওটা ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে ছোট্ট একটি স্কুল। সেখানে মা শিক্ষকতা করতেন। তিন বছর সেখানে পড়ি। তারপর বাবার পোস্টিংয়ের কারণে ওয়াশিংটন ডিসিতে চলে যাই। সেখানে ফ্রিডম হেল নামে একটা স্কুলে ভর্তি হই। তারপর আবার চট্টগ্রামে চলে আসি। সেখানে উইলিয়াম কেরি একাডেমিতে ভর্তি হই। এটি একটি আমেরিকান স্কুল। ২০০৮ সালে সেখান থেকে গ্রাজুয়েট করি। এরপর এক বছর মালয়েশিয়াতে পড়াশোনা করি। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং সিচুয়েশন (মজার পরিস্থিতি) হচ্ছে, আমি মালয়েশিয়ায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ভর্তি হই। এক বছর এ বিষয়ে পড়াশোনা করি। কিন্তু কানাডায় যখন ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে যাই, তারা আমার জিপি, মালয়েশিয়ার পারফরমেন্স দেখে বলল, “আমরা চাই না তুমি বিজনেস পড়ো। আমরা চাই তুমি ল’ পড়ো।” তখন চিন্তা করলাম, বেশ ল’-তে পড়াই যায়। একসময় ল’ পড়তে এতই মজা লাগল যে, অনার্স শেষ করলাম, মাস্টার্সও করলাম। ২০১৬ সালে আমার মাস্টার্স শেষ হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ফিরে আসি। সেই থেকে নর্থ সাউথে টিচিং প্রফেশনে।

ব্যারিস্টার মুনিজা কবির ও তার স্বামী সাকিফ আলমের সঙ্গে কথা বলছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ডালিম

ঢাকা পোস্ট : কার অনুপ্রেরণায় আইনশাস্ত্রে আসা…

ব্যারিস্টার মুনিজা কবির : তেমন কারও অনুপ্রেরণা নয়। আমার এ লেভেলের রেজাল্টটা এতই ভালো হলো যে, আমার মনের মধ্যে একটা সুপ্ত বাসনা তৈরি হলো। আমি প্র্যাকটিসিং লইয়ার হব অথবা প্র্যাকটিসিং ডাক্তার হব। আমার বাবা-মা খুবই খুশি ছিল এই ভেবে যে, আমাদের মেয়ে তো খুবই অ্যাম্বিসাস (উচ্চাকাঙ্ক্ষী)। অবশেষে আমি সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের হয়েও ল’পড়া শুরু করলাম।

ল’ পড়তে পড়তে আমার কাছে মনে হলো, বিষয়টি নিয়ে অনেক ইনজয় করছি। এছাড়া আমি যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম অনেক নারী যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। এগুলো টিভিতে দেখতাম, পত্রিকা-ম্যাগাজিনে পড়তাম, তখন আমার অনেক জিদ হতো। ভাবতাম ল’আমাকে পড়তেই হবে। তখন কিন্তু আমি ছোট একটা মেয়ে।

ওই সময় আমার মনে হতো, রেপিস্টদের ডেথ পেনাল্টি (মৃত্যুদণ্ড) হওয়া উচিত। সৌদি আরবে ধর্ষকদের যে শাস্তি সেটাই এ দেশে হওয়া উচিত। ভাবতাম আইনজীবী হয়ে ডেথ পেনাল্টি ইন্ট্রোডিউস (মৃত্যুদণ্ডের বাস্তবায়ন) করতে বলব। হাইকোর্টে গিয়ে রিট করব। তবে ল’ পড়ে আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম, ডেথ পেনাল্টি দিয়ে আসলে কিছুই হবে না। আরও অনেক কিছুর পরিবর্তন আনতে হবে।

সাকিফ আলম : আমার ইচ্ছা ছিল ব্যবসায় শিক্ষা পড়ার। তা হয়নি। কানাডায় যাওয়ার পর তারা আমাকে অ্যাডভাইস (পরামর্শ) দিল, তুমি আইন পড়। তখন আমি ল’ স্টার্ট (শুরু) করলাম।  

 ল’ পড়ার প্রথম কারণ হচ্ছে, আমার দাদা নুরুল ইসলাম রাজশাহীতে প্র্যাকটিস করতেন। এটা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগের কথা। দাদা নাইট কলেজে ল’ পড়তেন। তিনি সরকারি পোস্ট অফিসের কর্মকর্তা ছিলেন। অবসরের বয়স যখন কাছাকাছি তখন তিনি ল’ পড়া শুরু করেন। পরে তিনি কোর্টে প্র্যাকটিসও করেন। বাবাকে যখন বললাম, আমি ল’ পড়তে চাচ্ছি; বাবা বললেন, পড়।

সেকেন্ড রিজনটা (দ্বিতীয় কারণ) ছিল, আমার বাবা একজন আর্মি অফিসার। ক্যান্টনমেন্টে বড় হয়েছি। সেখানে সবসময় রুলস-রেজুলেশন (আইন-কানুন) ফলো (মেনে চলা) করা হয়। যখন ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হতাম, দেখতাম রুলস অ্যান্ড রেজুলেশনের কোনো প্রয়োগ নাই। এটি সমাজের সর্বত্র প্রয়োগের চিন্তা করতাম। তাই ভাবলাম, আমার ল’ টা পড়া উচিত। কারণ, এটি জানলে অন্যদের শেখাতে পারব। একসময় একটা চেঞ্জ (পরিবর্তন) আনতে পারব। এখনও চেঞ্জ আনতে পারিনি। দেখি, ভবিষ্যতে কী করতে পারি।

ঢাকা পোস্ট : শৈশব-কৈশোর… বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে এখন জীবনসঙ্গী। মাঝে প্রেম-ভালোবাসার কোনো গল্প আছে কিনা…

ব্যারিস্টার মুনিজা কবির : নর্থ সাউথে তাড়াহুড়ার মধ্যেই জয়েন করলাম। প্রথমদিন গিয়েই দেখি সাকিফ আমাদের ডিপার্টমেন্ট সেক্রেটারির রুমে বসে আছে। নর্থ সাউথের লেকচারারদের পৃথক রুম দেওয়া হয়। আমারও রুম ছিল কিন্তু চাবি ছিল না। চাবি আনতে সেক্রেটারির রুমে যাই। সেক্রেটারির রুমে ঢুকতেই সাকিফ বলে উঠল, আর ইউ স্টুডেন্ট? আমি বলি, না। আমি টিচার (শিক্ষক)। তখন থেকে পরিচয়।

আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম, ও আমাকে পছন্দ করে। সাকিফ আমার রুমে খুব আসা-যাওয়া করত। আমার সঙ্গে গল্প করতে, কথা বলতে আসত। অনেক হেল্প (সাহায্য) করত আমাকে। দেখলাম ও খুব ইন্টারেস্ট (আগ্রহ) দেখাচ্ছে, বাইরে যাওয়ার কথা বলছে। আমি তখন বাবা-মা-ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বললাম। ফ্রেন্ডদের সঙ্গে কথা বললাম। ফ্রেন্ডরা বলে, আচ্ছা ঠিক আছে। একটু চিনে দেখ, ছেলেটা কেমন। এভাবে কথা বলতে বলতেই ভালোলাগা। ফ্যামিলি নিয়ে উভয়েই কথা বললাম। তারপর আমাদের এনগেজমেন্ট হলো। ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর আমাদের আকদ হয়। ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠান হয়। 

সাকিফকে বিয়ে করব, আমি একদমই চিন্তা করিনি। বিয়ের পর এখন সাকিফকে বলি, তোমার সঙ্গে আমার কীভাবে দেখা হলো, কীভাবে বিয়ে করলাম— এটা খুবই আশ্চর্যের বিষয়।

সাকিফ আলম : এখানে একটা স্টোরি (গল্প) আছে। মুনিজা যে বলল, আমি শুধু ওর রুমে যেতাম; তা কিন্তু নয়। সে জয়েন (যোগদান) করার আগে আমাদের আরেকজন পার্টটাইম ফ্যাকাল্টি মেম্বার (খণ্ডকালীন অনুষদ সদস্য) জয়েন করেছিল। সেই ফ্যাকাল্টি মেম্বার আমাকে এসে বলে, সাকিফ তোমার যদি এ কোর্সে কোনো নোট থাকে আমাকে দিতে পারবে। তাহলে আমার একটু হেল্প (উপকার) হয়। আমি বললাম, ওকে। সব নোট আমি তাকে পাঠিয়ে দিলাম। তবে নোটগুলোতে কপি রাইট হিসেবে আমার (সাকিফ আলম) নাম লেখা ছিল। এর মধ্যে মুনিজার সঙ্গে আমার দেখা হলো। হঠাৎ একদিন মুনিজা আমার অফিসে এসে বলে, সাকিফ আমি ওকে (ওই ফ্যাকাল্টি মেম্বার) নোট পাঠাতে বলেছিলাম। সে নোট পাঠাল। বাট, আমি দেখি ওই নোটে তোমার নাম লেখা। ওগুলো কি তোমার নোট? আমি বললাম, হ্যাঁ। মুনিজা বলে, তুমি কি মাইন্ড করবা আমি যদি ওই নোটগুলো ক্লাসে ব্যবহার করি। আমি বললাম, নো-নো (না-না)। তুমি ইউজ (ব্যবহার) কর। ও বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। তারপর আমি বললাম, ওয়েট-ওয়েট (অপেক্ষা কর)। তুমি যদি আমার নোট ইউজ (ব্যবহার) কর, একটা কন্ডিশন (শর্ত) আছে। তোমার ফোন নম্বরটা আমাকে দিতে হবে। সে ফোন নম্বর আমাকে দিল। তারপর থেকে ফোনে কথা, গল্প, টেক্সট শুরু।

ব্যারিস্টার মুনিজা কবির : আমি ফোন নম্বর দিতে হেজিটেড ফিল (সঙ্কোচ বোধ) করিনি। বিকজ (কারণ), সে আমার কলিগ (সহকর্মী) ছিল। তবে ওইদিনই বুঝে গেলাম, আমার প্রতি ওর অনেক ইন্টারেস্ট (আগ্রহ) ছিল। সো (সুতরাং), সাকিফ খুব চালাকি করে ফোন নম্বরটা নিল। বাট (কিন্তু), বোকামি করে বুঝিয়ে দিল সে ইন্টারেস্টেড। হা-হা-হা।

সাকিফ আলম : এখন আমরা সৌভাগ্যবান একে অপরকে পেয়ে। মুনিজাকে পেয়ে আমার জীবনে বড় পরিবর্তন ঘটেছে।

ঢাকা পোস্ট : সফলতার জন্য যেসব বিষয় অনুসরণ করা উচিত…

সাকিফ আলম : সফলতার জন্য নিজের ভেতরেই প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। আমি লেখাপড়া করব এবং আমাকে সাকসেসফুল হতে হবে। এ দীপ্ত প্রত্যয় থাকতেই হবে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, মনে করেন, আমার বাবার মাল্টি মিলিয়ন ডলারের যদি একটা কোম্পানি থাকত, আমি কিন্তু খুব একটা হার্ড ওয়ার্ক (কঠোর পরিশ্রম) করতাম না। আমি চিন্তা করলাম, আমার ফাদার একজন গভর্নমেন্ট অফিসার (সরকারি কর্মকর্তা)। বাবা যখন রিটায়ার্ড (অবসর) করবেন, তখন আগের সুবিধা তো থাকবে না। নিজের কিছু করতে হবে। তাই, আমাকে সাকসেসফুল (সফল) হতে হবে। এটা যতই কঠিন হোক।

ঢাকা পোস্ট : আইনপড়ুয়াদের কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ আছে?

ব্যারিস্টার মুনিজা কবির : আইন পড়ে অনেক কিছু করা যায়। আইন পড়ে কোর্টে গিয়ে যে প্র্যাকটিসই করতে হবে, এমন নয়। অনেকে তো কোর্টে গিয়ে ইনজয় করে না। যারা চেম্বারে বা কোর্ট প্র্যাকটিসে ইনজয় করে না তাদের উদ্দেশ্যে বলব, তোমরা লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে ব্যাংকে জব করতে পার। আবার যেকোনো বিজনেস ইন্ডাস্ট্রি বা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি তে ল’ইয়ার হিসেবে জয়েন করতে পার। টিচিং, যেকোনো সরকারি চাকরিও করা যায়। পলিসি ডিপার্টমেন্টে কোনো জবও নেওয়া যায়। আরও অনেক সেক্টর আছে যেখানে জব করা যায়। পলিসি প্লানিং নিয়ে সরকারের সঙ্গে কাজও করা যায়। আবার ইচ্ছা করলে নিজের একটি এনজিও খোলা যায়।

সাকিফ আলম : আমি মুনিজার সঙ্গে আরও দুটি ক্ষেত্রের কথা বলব। যারা আইন পড়ছেন তারা আর্মিতেও জয়েন (যোগ) করতে পারেন। আর্মিতে একটা স্কোপ (সুযোগ) আছে, জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল। একজন আর্মি পারসন যদি কোনো অফেন্স (অপরাধ) করেন, সেজন্য কোর্ট মার্শাল করা হয়। সেখানেও ডিফেন্স দিতে হয়। তখন আর্মির ভেতরের  ল’ইয়াররা শুনানি করেন। এটাকে বলে জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল। সেকেন্ড হচ্ছে, আইন পড়লে ইজি ট্রানজিকশান মেক করা যায় পলিটিকসে (সহজে রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া যায়)। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, আমেরিকার বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা। আবার নতুন যিনি প্রেসিডেন্ট হলেন, জো বাইডেন। তারা কিন্তু সবাই ল’ইয়ার।

ঢাকা পোস্ট : আইনপড়ুয়াদের জন্য কোনো পরামর্শ…

ব্যারিস্টার মুনিজা কবির : যারা আইন পড়তে চাও তাদের বলব, তুমি অবভিয়াসলি (অবশ্যই) আইন পড়ে যাও। স্ট্রাগল (চেষ্টা) করতে থাক। তুমি যদি একটু ধৈর্য নিয়ে পড়তে পার, একসময় সুন্দর ক্যারিয়ার গঠনের পাশাপাশি সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারবে। সমাজে সংঘটিত অনিয়মের বিরুদ্ধে কোর্টে কেস ফাইল করে, রিট পিটিশন দায়ের করে ভালো একটা চেঞ্জ (পরিবর্তন) আনতে পারবে। সুষ্ঠু আইনের প্রয়োগ ছাড়া সোসাইটি (সমাজ) রান করতে পারে না।

সাকিফ আলম : যারা আইন পড়তে চাও তাদের জন্য আমার পরামর্শ হলো, এটা এমন একটা সাবজেক্ট (বিষয়), যা পড়ে তুমি সমাজের অনেক পরিবর্তন আনতে পার। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে আগে ব্যাপক ইভটিজিং হতো। কিন্তু এখন এ ধরনের কোনো অফেন্স (অপরাধ) নেই। এটাকে এখন বলা হয় সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট (যৌন হয়রানি)। পরিবর্তনটা কিন্তু হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমেই হয়েছে। আমরা আইন পড়ে উচ্চ আদালতে এভাবে কোনো অফেন্সের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারি। এভাবে সমাজের পরিবর্তন সম্ভব।

আমি বলব, আইন হচ্ছে একটা ফ্যান্টাস্টিক সাবজেক্ট (স্বপ্নসম্ভার বিষয়)।  বাট (কিন্তু), এটাই একমাত্র সাবজেক্ট নয়। তোমরা বিজনেস (ব্যবসা), সোসিওলজি (সমাজবিজ্ঞান), সাইকোলজি (মনোবিজ্ঞান) ইত্যাদি পড়েও সমাজে চেঞ্জ (পরিবর্তন) আনতে পার। যেমন- কোভিডের সময় ডক্টর-নার্সরা আমাদের হিরো। 

শিক্ষার্থীদের একটা কথাই বলব, সোসাইটিতে যাই হোক না কেন, সবসময় ডিপ্লোম্যাটিক (কৌশলপূর্ণ) ও লিগ্যালভাবে (বিধিসম্মতভাবে) ফাইট (সংগ্রাম) করবা। এভাবে চেষ্টা করলে একদিন চেঞ্জ (পরিবর্তন) হবেই।

ঢাকা পোস্ট : ছোটবেলা থেকেই মানুষের জন্য ভাবেন। সমাজে নানা অসঙ্গতি, দুর্নীতি বিরাজমান। পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব? এ বিষয়ে আপনাদের নিজস্ব কোনা চিন্তাভাবনা আছে কিনা?

ব্যারিস্টার মুনিজা কবির : নিজের যখন অনেক টাকা হবে তখন একটা এনজিও খোলার ইচ্ছা আছে। ইন দ্য নিয়ার ফিউচার (অদূর ভবিষ্যতে) এনজিও খুলতে চাই। বাট নট ইমিডিয়েটলি (তবে তাৎক্ষণিকভাবে নয়)। আমার এনজিওটা হবে গরিবদের জন্য। আর একটা কথা, আমি তখন এ লেভেলে পড়ি। রোজার সময় বাইরে বের হয়ে সবাইকে ফ্রুট (ফল) দিতাম। গুলশান থেকে কিনে গুলশান, বনানী বা ধানমন্ডির রাস্তার ধারে যেসব অসহায় মানুষ বসে থাকত, ইফতার পেত না, তাদের মাঝে বিতরণ করতাম। ভবিষ্যতে এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা আছে।

সাকিফ আলম : সোসাইটির জন্য আমি দুটা জিনিস করতে চাই। আমি এডুকেশনটা খুবই ভ্যালু করি (শিক্ষার মূল্যায়ন)। আমার একটা ড্রিম (স্বপ্ন) হচ্ছে, স্কলারশিপ (ছাত্রবৃত্তি) চালু করা। গরিব শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ভালো রেজাল্ট (ফল) করবে, তাদের জন্য বিদেশে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা। স্কলারশিপটা দেওয়া হবে মেরিট বেসিসে (মেধার ভিত্তিতে)। এসএসসি, এইচএসসিতে যারা ভালো ফল করবে তাদের স্কলারশিপ দেওয়া হবে।

সেকেন্ড (দ্বিতীয় ইচ্ছা) হচ্ছে, আমি চাই আইনটা মানুষের কাছে সহজবোধ্য করা। সংবিধানে মানুষকে যে রাইটস (অধিকার) দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সব মানুষকে জানানো। বেসিক (সাধারণ) আইন সম্পর্কেও মানুষকে ধারণা দেওয়া।

দ্বিতীয় পর্বে থাকছে >> ওয়ার্ল্ডস হাইয়েস্ট মার্ক পাওয়া ব্যারিস্টার মুনিজার গল্প

এমএইচডি/এমএআর/