‘দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে দুর্নীতি থেকে বিরত থাকুন। দুর্নীতি করলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিচারের ব্যবস্থা করতে সবার সহযোগিতা চাই।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুর্নীতিবাজদের উদ্দেশ্যে এমন বার্তা দিলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ

অন্যদিকে, সংস্থাটির কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান মনে করেন, দুদকের কার্যকর ভূমিকার কারণে মানুষ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে।

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা যেসব অভিযোগ পাই, সেগুলো যাতে সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও তদন্ত করে দুর্নীতিবাজদের আদালতের মুখোমুখি করে বিচারের ব্যবস্থা করতে পারি, সেজন্য সবার সহযোগিতা চাই।’

আরও পড়ুন >> ৬ মাসে দুর্নীতিবাজদের ৬৮২ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক-ফ্রিজ

১৮তম বার্ষিকীতে এসে দুদকের লক্ষ্য কতটুকু পূরণ হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লক্ষ্য অর্জন হয়ে গেলে তো দুদকের কাজ শেষ। যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে দুদক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এটি কখনও থামবে না। এটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুর্নীতিবাজদের উদ্দেশ্যে কোনো বার্তা দিচ্ছেন কি না— এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের বার্তা দিলে শুনবে কি না, জানি না। আমার বার্তা হলো, দুর্নীতি করবেন না। দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে দুর্নীতি থেকে বিরত থাকুন। দুর্নীতি বৈষম্য তৈরি করে, দেশকে পিছিয়ে দেয়। দুর্নীতি করলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। দুর্নীতি করলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের চেষ্টা থাকবে আমাদের।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ / ছবি- সংগৃহীত

দুদকের বিগত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অভিযোগের হার অনেক বেড়েছে। জনগণের প্রত্যাশা এখনও সেভাবে পূরণ করা যায়নি। বরং বিভিন্ন সময় চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে— এসব বিষয়ে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ জেগে উঠেছে। এটি দুদকের বড় অর্জন।’

‘দুর্নীতিবাজদের মানুষ অপছন্দ করে। মানুষের ভেতরে এক ধরনের চেতনা জাগ্রত হয়েছে। দুর্নীতিবাজরা অবৈধ আয়ের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় করে বিলাসী জীবন কাটাবেন, আর সাধারণ মানুষ কষ্ট পাবে— এটির বিরুদ্ধে মানুষ জেগে উঠেছে। আমি মনে করি, বর্তমানে দুদক একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠান। দুর্নীতিবাজদের জন্য ভীতিকর প্রতিষ্ঠানও বটে।’

আরও পড়ুন >> অভিযোগের বিষয়ে অপসারিত দুদক কর্মকর্তা শরীফের যত ব্যাখ্যা

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান বিভাগের কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান / ছবি- ঢাকা পোস্ট

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি সুলতান হোসেন খানের নেতৃত্বে ২০০৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু হয় দুর্নীতি দমন কমিশনের। এরপর যথাক্রমে সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরী, গোলাম রহমান, মো. বদিউজ্জামান ও ইকবাল মাহমুদের পর ২০২০ সালের ১০ মার্চ দায়িত্ব নেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।

মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ দায়িত্ব নেওয়ার পর পেরিয়ে গেছে দেড় বছরের বেশি সময়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সোমবার দুপুরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদকের বিগত দিনের অর্জন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানাবেন তিনি।

আরও পড়ুন >> ঘুষ নিলেন, ভুক্তভোগীকে মামলায়ও ফাঁসালেন তিনি!

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয় / ছবি- সংগৃহীত

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের (২০২২ সাল) সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুদকে তিন হাজার ৮৭৪টি দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন এবং এক হাজার ৫২১টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়া সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দুই হাজার ৭৮৯টি চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। এ সময়ে ১৫ হাজার ৫৪৬টি অভিযোগ দুদকে জমা হয়েছে।

একই সময়ে তিন হাজার ৩৫৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৯৯৮টি মামলার বিচার কার্যক্রম বর্তমানে চলমান।

আরএম/এমএআর/