চায়ের কাপে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ঝড়
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় ছিল ফুটবল। নানা বিবর্তনের কারণে দেশি ফুটবলের সেই জনপ্রিয়তা যদিও ধরে রাখা যায়নি। তবে বিশ্বকাপ এলেই যেন বাড়তি উন্মাদনা শুরু হয় ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে। কে কোন দল সাপোর্ট করে, কার যোগ্যতা বেশি, কে বেশি ভালো খেলে-কতটা শিরোপা পেয়েছে—এসব নিয়েই থাকে মাতামাতি।
পাড়ার টঙ দোকানের চায়ে আড্ডা থেকে শুরু করে অফিস-আদালত সবখানেই ফুটবল নিয়ে আলোচনা সরগরম। প্রিয় দল কিংবা খেলোয়াড় নিয়েই উচ্ছ্বাস বেশি থাকে ভক্তদেরে মধ্যে। বাংলাদেশে পাঁচ বারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল এবং ২ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার সমর্থক বেশি। বিশেষ করে এই দুই দলের তারকা খেলোয়াড় মেসি-নেইমান নিয়েই মাতামাতি বেশি।
বিজ্ঞাপন
এবারের কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে আজ বিকেলে দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে অনেকটাই সহজ প্রতিপক্ষ সৌদি আরবের।
বিজ্ঞাপন
ফুটবল বিশ্বকাপ উন্মাদনায় ভরপুর, বিশ্বকাপ নিয়ে মাতামাতির ব্যাপারটা পুরোনোই এই দেশের মানুষের জন্য। বাইরের দেশ থেকে কোনো ব্যক্তি বিশ্বকাপ মৌসুমে বাংলাদেশে এলে কিছুটা কনফিউজড হয়ে যেতে হবে। ভেবে নিতে পারেন ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক বুঝি বাংলাদেশ। কারণ সমর্থক দলের, খেলোয়াড়দের নিয়ে মধুর বিতর্কে রূপ নিয়েছে সবত্রই।
প্রিয় দলের জার্সি পরে, পতাকা ওড়ানো হচ্ছে ছাদে ছাদে। শুধু ছাদে প্রিয় দলের পতাকাই নয়, বিভিন্ন দেয়ালেও শোভা পাচ্ছে পতাকা, চিকা মারা, জার্সি পতাকা নিয়ে এলাকাভিত্তিক চলছে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা। চায়ের দোকানে, পাড়া মহল্লার আড্ডায়, গণপরিবহনে, অফিস অফিসে সহকর্মীদের মধ্যে চলছে বিশ্বকাপ দল নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা, সমালোচনা, বিতর্ক। বাদ যায়নি ফেসবুকের টাইম লাইনও, সেই সঙ্গে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি। অনেকেরে মতে, বিশ্বকাপ নিয়ে বিশ্বজুড়ে উচ্ছ্বাস, আবেগের অন্ত নেই, তবে বাংলাদেশে মনে হয় একটু বেশিই!
রাজধানীর গুলশান লেকপাড়ের পূর্ব দিকে পুরো এলাকাজুড়ে ছেয়ে গেছে এবারের বিশ্বকাপের শিরোপার দাবিদার আর্জেন্টিনার পতাকা দিয়ে। সঙ্গে দেয়ালে দেয়ালে লিওনেল মেসির ছবি, গ্রাফিতি। বাড়ির গ্যারেজে, বড় বড় পার্কিংয়ের নিচে, রুমে, ছাদে, দোকানে নেওয়া হয়েছে বড় টিভি বা মিনি প্রজেক্টরের মাধ্যমে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা।
মেসির আর্জেন্টিনার সমর্থক তৌফিকুল ইসলাম। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তৌফিকুল বলেন, বিশ্বকাপ এলে প্রিয় দলের পতাকা টানানো বা দেওয়াল চিত্র ছোট বেলা থেকেই পাড়ার ছেলেরা করে আসছি। যে যেই দল সাপোর্ট করে তার পতাকা টানাচ্ছে। মাঝে মধ্যে আমারে বন্ধুদের মধ্যে বিশ্বকাপ নিয়ে তুমুল বিতর্কও হচ্ছে। আজ আমরা একটি বাসার গ্যারেজে প্রজেক্টর ভাড়া করে খেলা দেখানোর আয়োজন করেছি। একইভাবে ব্রাজিলের খেলার দিনেও অন্য সমর্থকরা এভাবে খেলা দেখানোর আয়োজন করবে বলে জেনেছি।
অন্যদিকে রাজধানীর মগবাজার এলাকার শাওন, বিদ্যুৎ, রাসেলসহ কয়েক যুবক বাড়ির ছাদে বড় টিভিতে আর্জেন্টিার খেলা দেখানো আয়োজন করেছে। তবে খেলার দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছে ব্রাজিল সমর্থকদেরও। তাদের মতে, খেলার সময় যোগ্য বিতর্কের প্রতিপক্ষ না থাকলে জমে না।
কিশোর আহসান হাবিব শাওন বলেন, প্রতি বছর প্রিয় দলের খেলাগুলো পাড়ার ছেলেরা আর বন্ধুরা মিলে দেখি। আজকে বিকেলে খেলা দেখার জন্য আমরা এমন প্রস্তুতি নিয়েছি। সবাই এক সঙ্গে খেলা দেখার মজা অন্য রকমের। সেই সঙ্গে ছাদে বড় বড় পতাকাও লাগিয়ে দিয়েছি।
এদিকে বিশ্বকাপে নগরবাসীর এমন উন্মাদনাকে আরও বাড়িয়ে দিতে সব অঞ্চলে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর আয়োজন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
প্রাথমিকভাবে ডিএনসিসি এলাকার নয়টি স্থানে বড় পর্দায় সবাই একসঙ্গে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করেছে সংস্থাটি। ডিএনসিসি আওতাধীন এলাকার ৯টি স্থানের মধ্যে রয়েছে, মানিক মিয়া এভিনিউ, হাতিরঝিল মুজিব চত্বর, খিলগাঁও তালতলা মার্কেট, গুলশান ২ নগর ভবনের সামনে, কাচকুড়া কলেজ মাঠ, প্যারিস রোড সংলগ্ন মাঠ, শ্যামলী পার্ক, মোহাম্মাপুর লাউতলা খাল সংলগ্ন মাঠে খেলা দেখানোর আয়োজন করেছে ডিএনসিসি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জানিয়েছেন, ডিএনসিসি এলাকায় কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ এর খেলা বড় পর্দায় (ডিজিটাল স্ক্রিন) মাসব্যাপী প্রদর্শন উদ্বোধন করা হবে। আজ দুপুর আড়াইটায় মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের প্যারিস রোড সংলগ্ন মাঠে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এএসএস/এসএম