ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) কোর্টের সামনে থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার প্রতিবেদন জমা দিতে আরও সময় চাইবে তদন্ত কমিটি। এর আগে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গঠিত এই কমিটির।

কমিটি সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন জমা দিতে আরও সময় চাইবে কমিটি। 

আসামি পালিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রণয়নের কথা রয়েছে এই তদন্ত কমিটির।

গত রোববার (২০ নভেম্বর) বিকেলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সই করা এক আদেশে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ডিএমপি কমিশনারের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) তদন্ত কমিটির সভাপতি ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এ কে এম হাফিজ আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হচ্ছে না। তদন্ত শেষ করতে আরও সময় লাগবে।

কমিটি গঠন নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের আদেশে বলা হয়, সিএমএ কোর্টের সামনে থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এ সংক্রান্তে দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন>>জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সভাপতি করে কমিটির বাকি চার সদস্য হলেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন), যুগ্ম কমিশনার (সিটিটিসি), ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ও ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সিআরও)।

উল্লেখ্য, গত রোববার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে দুই জঙ্গিকে একটি মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। হাজিরা শেষে পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করে জঙ্গি সদস্য মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেওয়া নেয় তাদের সহযোগীরা। এই দুই জঙ্গি দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

আরও পড়ুন>> জঙ্গি ছিনতাই : রিমান্ডে ১০ আসামি

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি আসামি ছিনতাইয়ের মাস্টারমাইন্ড হলেন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রধান সমন্বয়ক মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। তার অনুমতিতে এই ছিনতাই অপারেশন পরিচালনা করেন সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মশিউর রহমান ওরফে আইমান।

গ্রেপ্তার থাকা জঙ্গি আরাফাত ও সবুরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, কনডেম সেলে থাকা ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি আসামিরা প্রায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতেন। কারাগারে বসেই পরিকল্পনা হয় আসামি ছিনতাইয়ের।

প্রথমে ত্রিশালের জঙ্গি ছিনতাইয়ের মতো প্রিজনভ্যানে হামলার করে সহযোগীদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে কাশিমপুর থেকে পুরান ঢাকায় আদালত পর্যন্ত আনা-নেওয়ার সময় প্রিজনভ্যানে হামলা করাটা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয় তাদের।

তাই তুলনামূলক কম নিরাপত্তা থাকায় ছিনতাই অপারেশনের স্পট হিসেবে বেছে নেয় আদালত প্রাঙ্গণকে। আর অপারেশনের জঙ্গি সদস্যদের ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যেতে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছিল সহযোগীরা।

আরও পড়ুন>>জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মিশনে অংশ নেয় ১৭-১৮ জন

জানা গেছে, ঘটনার পর তদন্তের অংশ হিসেবে সোমবার (২১ নভেম্বর) সিটিটিসি একাধিক টিম কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার পরিদর্শনে যায়। প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে তারা কারাগার থেকে কার মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে জঙ্গিরা বাইরে যোগাযোগ করেছিল তা জানার চেষ্টাও চলছে।

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আদালত চত্বর থেকে দুই জঙ্গি সদস্যকে ছিনতাই অপরারেশনে নেতৃত্বদানকারীর নাম-পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এই অপারেশনে তাদের বেশকয়েকজন সহযোগীকেও শনাক্ত করা হয়েছে। জঙ্গি ছিনতাই অপারেশনে নেতৃত্বদানকারীসহ সবাইকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি।

এমএসি/এমএ