মিরপুরই যেন আরেক লুসাইল স্টেডিয়াম
মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনের প্যারিস রোড সংলগ্ন বিশাল এক মাঠে বড় একটা পর্দা। আর এই বড় পর্দা ঘিরেই হাজার হাজার মানুষ। কেউ এসেছেন জার্সি পরে, কেউবা প্রিয় দল আর্জেন্টিনার পতাকা হাতে। স্ক্রিনে যখন বল পায়ে প্রিয় দলের খেলোয়াড়রা এগিয়ে যাচ্ছে তখন হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার, উন্মাদনায় ভাসছে পুরো মাঠ। আশপাশের এলাকা থেকেও এই মাঠে বড় স্ক্রিনে খেলা দেখতে এসেছে সবাই দলবেঁধে।
এই মাঠেই প্রিয় দলের সমর্থকদের মাতামাতি দেখে মনে হচ্ছে এটি যেন পারস্য উপসাগরের দেশ কাতারের দোহার লুসাইল স্টেডিয়াম। সেখানেই গড়াচ্ছে লিওনেল মেসির দল আর্জেন্টিনা আর তাদের প্রতিপক্ষ সৌদি আরবের ম্যাচটি।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বকাপের আজকের ম্যাচটি যোজন যোজন দূরে অনুষ্ঠিত হলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে বড় স্ক্রিনে খেলা দেখতে খেলা প্রেমীরা দুপুর থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিল, খেলার দেখার পাশাপাশি প্রতিপক্ষ বা অন্য কোনো প্রিয় দলের পক্ষে বিপক্ষে চলছে মধুর বিতর্কও।
বিজ্ঞাপন
ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশিরা ফুটবল পাগল জাতি। তাই বিশ্বকাপ উন্মাদনাটা খুবই স্বাভাবিক চিত্র। আর উন্মাদনাকে বাড়িয়ে দিতে নতুন মাত্রা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।প্রাথমিকভাবে ডিএনসিসি এলাকার নয়টি স্থানে বড় পর্দায় সবাই একসঙ্গে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করেছে সংস্থাটি। ডিএনসিসি আওতাধীন এলাকার ৯টি স্থানের মধ্যে রয়েছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, হাতির ঝিল মুজিব চত্বর, খিলগাঁও তালতলা মার্কেট, গুলশান ২ নগর ভবনের সামনে, কাচকুড়া কলেজ মাঠ, প্যারিস রোড সংলগ্ন মাঠ, শ্যামলী পার্ক, মোহাম্মদপুর লাউতলা খাল সংলগ্ন মাঠে খেলা দেখানোর আয়োজন করেছে ডিএনসিসি।
মিরপুর প্যারিস রোড সংলগ্ন এই মাঠটিতে খেলা দেখতে এসেছেন পল্লবী এলাকার বাসিন্দা সাকিবুর রহমান ও তার বন্ধুরা। সাকিবুর বলেন, বড় মাঠে বড় স্ক্রিনে প্রিয় দলের খেলা দেখার মজাটাই অন্য রকমের। এখানে হাজার হাজার লোক একসঙ্গে খেলা দেখছেন। প্রচুর চিল্লাচিল্লি আর আনন্দ করতেই এখানে খেলা দেখতে এসেছি। সঙ্গে আছে অনেক বন্ধুরাও তাই ঘরে বসে খেলার দেখার চেয়ে আনন্দের মাত্রা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে এখানে এসে।
কালশী এলাকা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন আরেক শিক্ষার্থী এহসানুলল বারি। তিনি বলেন, সকাল থেকে সিটি করপোরেশন মাইকে অ্যানাউন্স করছে যে এই এলাকায় বড় পর্দায় খেলার দেখানো হবে। এটা জেনেই মাঠে বড় পর্দায় খেলা দেখতে এসেছি। এখানে প্রচুর পরিমাণে মানুষ এসেছে খেলা দেখতে তাই প্রিয় দলের খেলা দেখে উচ্ছ্বাস আরও বাড়ছে।
এদিকে খেলা শুরুর সময় এমন বড় স্ক্রিনে বিশ্বকাপের খেলা দেখানো কার্যক্রম উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সবাই যেন মাঠমুখি হয়, একসঙ্গে আনন্দ করে খেলা দেখতে পারে সে কারণে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বড় পর্দায় খেলা দেখানো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আজ নয়টি স্থানে একযোগে খেলা দেখানোর আয়োজন করেছি। মাঠে খেলা দেখার এমন আয়োজন পুরো বিশ্বকাপ সময়জুড়েই থাকবে। আর এ জন্য সব ধরনের খরচ ডিএনসিসি নিজেই বহন করবে।
এদিকে মাঠে বড় স্ক্রিনে খেলা দেখতে আসা খেলাপ্রেমীরা মাঠে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রেখেছেন। সমর্থক দলের, খেলোয়াড়দের নিয়ে মধুর বিতর্কে রূপ নিয়েছে সর্বত্রই। প্রিয় দলের জার্সি পরে, মাঠের আশেপাশে ছাদে ছাদে পতাকা উড়ানো হচ্ছে । শুধু ছাদে প্রিয় দলের পতাকাই নয়, বিভিন্ন দেওয়ালেও শোভা পাচ্ছে পতাকা, জার্সি পতাকা নিয়ে এলাকাভিত্তিক চলছে শোভাযাত্রা।
আশেপাশের চায়ের দোকানে, পাড়া মহল্লার আড্ডায়, গণপরিবহনে চলছে বিশ্বকাপ দল নিয়ে আলোচনা,পর্যালোচনা, সমালোচনা, বিতর্ক। বাদ যায়নি ফেসবুকের টাইম লাইনও, সেই সঙ্গে দেওয়ালে দেওয়ালে গ্রাফিতি। বিশ্বকাপ নিয়ে বিশ্বজুড়ে উচ্ছ্বাস, আবেগের অন্ত নেই, তবে এই আবেগ মনে হয় বাংলাদেশেই একটু বেশিই বেশি।
এএসএস/এমএ