করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালিত হয় ফ্লাইটগুলো

করোনায় একে একে বন্ধ হতে থাকে বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরগুলো। পাশাপাশি বন্ধ হতে থাকে এয়ারলাইন্সগুলোর অপারেশন। একপর্যায়ে অনেক এয়ারলাইন্সই দেউলিয়া হয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। বেকার হয়ে পড়েন হাজার হাজার বিমানকর্মী। তবে এর মধ্যেও টিকে থাকে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলো। একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম।

২০২০ সালের ৮ মার্চ। দেশে প্রথমবারের মতো একদিনে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর সরকারিভাবে দেওয়া হয় সাধারণ ছুটির ঘোষণা। একইসঙ্গে দেশের সড়ক, নৌ ও বিমানবন্দরগুলো বন্ধের ঘোষণা আসে। ২১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ছাড়া সব দেশের সঙ্গে এবং অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এরপর কয়েকদিনের মাথায় চীন ছাড়া সব দেশের সঙ্গে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

২১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ছাড়া সব দেশের সঙ্গে এবং অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় বেবিচক। এরপর কয়েকদিনের মাথায় চীন ছাড়া সব দেশের সঙ্গে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়

করোনায় কাজ হারিয়ে সে সময় বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশে ফিরতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন। একইভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকরাও নিজ নিজ দেশে ফিরতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা ফিরতে পারছিলেন না। তখন বেবিচকের নেতৃত্বে এগিয়ে আসে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলো, সঙ্গে সহায়তার হাত বাড়ায় বিমানবন্দরগুলো। 

করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় আকাশপথ, সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকে উড়োজাহাজগুলো

করোনা শনাক্তের আগেই সতর্ক ছিল বেবিচক

করোনায় আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (আইকাও) নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এভিয়েশন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে প্রায়ই নতুন নতুন ও কার্যকর নির্দেশনা দিয়েছে বেবিচক। নির্দিষ্ট সময় পর ফ্লাইট চালু করে দেওয়া, প্লেনের আসন বিন্যাস, একের পর এক এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলাচলের অনুমোদনসহ সবধরনের ইতিবাচক নির্দেশনা দিয়েছে তারা। মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের হার বুঝে তারা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং যাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক করে করোনা টেস্টের ‘নেগেটিভ’ রিপোর্ট। যুক্তরাজ্যে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে দেশটি থেকে আগত যাত্রীদের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনাও দেয় বেবিচক।

সে সময় আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। অনেক দেশে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি, আবার পরিস্থিতি দেখে তা প্রত্যাহার করেছি

এম. মফিদুর রহমান, চেয়ারম্যান, বেবিচক

এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের নিয়মিত ফ্লাইট চালু থাকায় বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের আগে থেকেই সচেতন ছিল বেবিচক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আইকাওসহ আমাদের নিজস্ব গাইডলাইনগুলো নিয়মিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। পাইলট ও কেবিন ক্রুদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট পরিচালনা করতে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রবাসীদের দেশে ফেরার পর কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে সময় আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। অনেক দেশে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি, আবার পরিস্থিতি দেখে তা প্রত্যাহার করেছি।’

‘করোনাকালে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা সরকারি সাধারণ ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ১৬ জুন থেকে ঢাকা-লন্ডন এবং কাতার রুটে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে একে একে অন্য দেশেও যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, এয়ারলাইন্সগুলোকে টিকিয়ে রাখতে করোনার পরও আমরা প্রণোদনা দিয়েছি। নির্দিষ্ট কয়েক মাসের অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ মওকুফ করা হয়েছে।

করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স চালিয়ে যায় তাদের কার্যক্রম

একমুহূর্তও বন্ধ হয়নি ঢাকা বিমানবন্দরের কার্যক্রম

করোনাকালে প্রতিদিনই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলাদেশিদের নিয়ে ফ্লাইট নেমেছে। ওইসব প্রবাসীকে বিমানবন্দরে নামার পর স্ক্রিনিং, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইমিগ্রেশনসহ সব ধরনের কার্যক্রম চলেছে বিমানবন্দরে। আগের মতোই তিন শিফটে কাজ করেছেন বিমানবন্দরের কর্মীরা। করোনায় আক্রান্তও হয়েছেন কয়েকজন। সুস্থ হয়ে তারা আবারও ফিরেছেন কাজে।

বিমানবন্দরের প্রত্যেক কর্মী অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে ওই সময় সাহসিকতার প্রমাণ দিয়েছেন। সবার প্রচেষ্টায় আমরা সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি

তৌহিদ উল-আহসান, পরিচালক, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদ উল-আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘লকডাউনের সময় আন্তর্জাতিক শিডিউলড ফ্লাইটগুলো বন্ধ থাকলেও বিমানবন্দরের কার্যক্রম একমুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি। ১০০-এর বেশি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বিদেশিরাও দেশ ছেড়েছেন। এছাড়া বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইটগুলোও চালু ছিল।’

‘বিমানবন্দরের প্রত্যেক কর্মী অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে ওই সময় সাহসিকতার  প্রমাণ দিয়েছেন। সবার প্রচেষ্টায় আমরা সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।’

করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালিত হয় ফ্লাইটগুলো

তৎপর ছিল এয়ারলাইন্সগুলো

চীনের গুয়াংজু রুটের ফ্লাইট বন্ধ না হওয়ায় করোনা সংকটের পুরোটা সময় বিরতিহীনভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। এখন পর্যন্ত চেন্নাইসহ আশপাশের দেশগুলো থেকে ১০০টির মতো বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে সংস্থাটি।

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও সৌদি আরব, লেবানন, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ প্রায় ১৫টি দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করে প্রবাসীদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনেছে।

উড়োজাহাজের সংখ্যা ও রুট কম হলেও করোনাকালে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েছে নভোএয়ার। গুয়াহাটি, কলকাতা, সিলেটে প্রায় ১০টির মতো ফ্লাইট পরিচালনা করেছে তারা।

দেশীয় এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি টার্কিশ এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, এয়ার ইন্ডিয়াসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা মহামারির মধ্যেও ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশিদের আনা-নেওয়া করেছে।
 
এআর/আরএইচ/এমএআর/এমএমজে