ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলো শিক্ষাব্যবস্থার সব পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করাসহ সাত দফা সুপারিশ জানিয়েছে শিক্ষা গবেষণা সংসদ, ঢাকা। শনিবার (২৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত সেমিনার মূল প্রবন্ধে এসব সুপারিশ জানান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থটের (বিআইআইটি) মহাপরিচালক শিক্ষাবিদ ড. আবদুল আজিজ।

অন্য সুপারিশগুলো হচ্ছে— ভিন্নধর্মের মানুষদের জন্য স্বস্ব ধর্মীয় শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা, সব ধর্মের ওপর তুলনামূলক আলোচনা সম্পর্কিত বিশেষ কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা, বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষায় ব্যবসা ও কারিগরি শিক্ষা অনুষদের প্রচলন করা, নৈতিক শিক্ষার প্রসারের জন্য জাতীয় সমন্বিত পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক করা, জাতীয় শিক্ষা মাধ্যম হিসেবে বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি আরবি ভাষাকেও স্বীকৃতি দেওয়া এবং কারিগরি শিক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা।


সেমিনারে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম শমসের আলী বলেন, যে শিক্ষা মানুষের কল্যাণে ও উপকারে আসে না তা শিক্ষা নয়। যে শিক্ষা দুনিয়ার শান্তি ও পরকালে মুক্তির সহায়ক তাই প্রকৃত শিক্ষা। তাই আমরা বলছি সব মানুষের কল্যাণের জন্য একমুখী ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ইসলামি শিক্ষার প্রতিপাদ্য বিষয় হলো বিশ্বভ্রাতৃত্ব, মানবকল্যাণ, দেশপ্রেম, সামাজিক উন্নয়ন, ত্যাগ ও বিনয়। সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন এবং আদর্শ গুণাবলীসম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি করতে দেশের সব স্তরে ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার কুফল দেখলে আতঙ্কিত হতে হয়। আজ দেশে নীতিনৈতিকতার বড় অভাব। ঘুষ, দুর্নীতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, কালোবাজারির মতো গুরুতর সব অপরাধ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে। অফিসের বড় কর্তা থেকে বয়-বেয়ারা পর্যন্ত প্রায় সর্বস্তরের কর্মচারী দুর্নীতিগ্রস্ত। স্বামীর সামনেই স্ত্রীকে ধর্ষণ, বাবার লাশের জন্য বসে থাকা মেয়েকে ধর্ষণ, প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ, হত্যার মতো নৃশংস ও মর্মান্তিক খবর প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। নৈতিকতার এ বিপর্যয় জাতীয়ভাবে আমাদের অসহায়ভাবে সবাইকে অবলোকন করতে হচ্ছে। ওহির জ্ঞান ছাড়া কোনো মানুষ জ্ঞানী হতে পারে না। শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা চালু করতে হবে। দুনিয়ার সব শিক্ষাবিদই এ বিষয়ে একমত যে শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে চরিত্র গঠন।

শিক্ষা গবেষণা সংসদ, ঢাকার আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম ফজলুল হক বলেন, শিক্ষা মানে জ্ঞানার্জন করা। সত্যের ওপর ভিত্তি করে জীবন গড়া। ইংরেজদের প্রবর্তিত শিক্ষার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে বর্তমান সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ইসলামী মূল্যবোধ শেখার কোনো সুযোগ পায় না। মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায়ও বর্তমানে ইসলামকে একটা পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা রূপে শিক্ষা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা ইসলামের বিশ্বজনীন ব্যাপক আদর্শিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক নুর নবী মানিক, বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. কোরবান আলী, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ ড. খলিলুর রহমান মাদানি, আইইএস’র পরিচালক ইকবাল হোসেন ভুঁইয়া প্রমুখ।

/এমএইচএন/এসএসএইচ/