মার্কিন প্রশাসন নতুন করে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেবে না। আর সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না— এমটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। এমন প্রত্যাশার কারণ হিসেবে প্রতিমন্ত্রী বলছেন, দেশটির সঙ্গে এনগেজমেন্ট বাড়িয়েছে সরকার।

রোববার (৪ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন প্রত্যাশার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।

শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি মার্কিন প্রশাসন নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেবে না। আমরা মনে করি সাম্প্রতিক কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না। কারণ আমরা এনগেজমেন্ট বাড়িয়েছি। যে তথ্য তারা (যুক্তরাষ্ট্র) চাচ্ছিল, সেটা যতটুকু সম্ভব আমরা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা অব্যাহতভাবে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে যে এনগেজমেন্টে আছি, আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আশা করছি না।

সম্প্রতি কুমিল্লায় সমাবেশ থেকে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা ১০ ডিসেম্বর কী হতে পারে তার একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। রুমিন পুলিশের উদ্দেশে বলেছিলেন, 'র‍্যাব আমাদের ভাইদের গুলি করছে। তাদের আমেরিকা নিষিদ্ধ করেছে। আপনারা গুলি করবেন না, তাহলে আপনাদেরও নিষিদ্ধ করবে।'

নতুন করে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিএনপির এ নেতার বক্তব্যের প্রেক্ষাপট টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞা আসবে। এটা খুব দুঃখজনক। আমার কাছে মনে হয়, ১০ ডিসেম্বর তারিখটা তারা জনসভা নির্ধারণ করেছেন তাদের লবিস্টের কথায়। সমন্বিত একটা পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত হিসেবে তারা ১০ ডিসেম্বর বেছে নিয়েছে।

আরও পড়ুন : র‌্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সময় লাগবে

লবিস্টের কথায় বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর। তিনি বলেন, গত বছর ১০ ডিসেম্বর মার্কিন প্রশাসন থেকে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তারা (বিএনপি) যে এত অর্থ ব্যয় করেছে তাদের লবিস্টরাই বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা তোমাদের আরও নিষেধাজ্ঞা আদায় করে দেব। ওইদিন তোমরা রাজনৈতিক সভা কর। তাহলে তোমাদের সহায়ক হবে। কিন্তু আমার মনে হয় তাদের প্রচেষ্টা এবারও ব্যর্থ হবে।

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা তোলার জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় যেসব মেকানিজম দরকার, সেগুলো সম্প্রতি সরকার হাতে পেয়েছে বলে জানান শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা হয়ে যাওয়ার পর এটা তুলে নেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সে জায়গায় আইনি প্রক্রিয়ায় একমাত্র পন্থা। কূটনৈতিক পন্থা আছে। আইনি প্রক্রিয়া করার জন্য যে তথ্যগুলো আমাদের দরকার মোটামুটি যে তথ্যটা পেলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপে কেস ফাইল করতে পারব, সেটা আমরা অতি সম্প্রতি পেয়েছি। কার বিরুদ্ধে কি অভিযোগের ভিত্তিতে তারা এ কাজটি করলেন, সে তথ্যগুলো আমরা এক বছর পরে পেলাম।

আরও পড়ুন : ৭ কর্মকর্তাসহ র‍্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে সরকার আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন করে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না- এমন কোনো ইঙ্গিত সরকার পেয়েছে কি না, জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ফ্রেশ কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না।

সম্প্রতি ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। সেখানে আলোচনার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা অব্যাহত এনগেজমেন্টের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এটা ক্লোজডোর মিটিং। এটা ওপেন ছিল না। সেখানে কি আলাপ হয়েছে আমি বলব না।

র‌্যাবকে নতুন করে সাজানোর বিষয়ে সরকার ভাবছে কি না -এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, সব কিছুতে রিফর্মের প্রয়োজন আছে। রিফর্মটা আমরা আমাদের স্বার্থেই করি। র‌্যাবকে বিএনপি-জামায়াত কালচার থেকে আওয়ামী লীগ সরকার ফেরত নিয়ে এসেছে।

আগামী ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর।

এনআই/এসএম