চাকরি জীবনের শুরুতেই আপন মানুষ ছেড়ে বহু দূরে ছিলেন ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি। এজন্য অনেকেই কুকথা বলেছিল, সেসব কানেই তোলেননি তিনি। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে হয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি)। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক শাহাদাত হোসেন রাকিব। 

ঢাকা পোস্ট: নারী হিসেবে কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন? 
ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি: বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও স্পিকারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে এখন নারী। দেশে নারীর ক্ষমতায়নে অনেক প্রসার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নারীদের ক্ষমতায়নকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ের সব নারীই সাহস ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারছেন। একসময় নারী সম্পর্কে মানুষের মনে যে নেতিবাচক ধারণা ছিল, এখন সেই ধারণা নেই। তাই কর্মক্ষেত্রে আমার কোন সমস্যা হয়নি বা হচ্ছেও না। এখানকার স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে প্রশাসন সবাই আমাকে সহযোগিতা করছে। তারা আমাকে পজিটিভলি নিয়েছেন এ কারণেই আমি কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখছি না। এছাড়া একজন মানুষ দীর্ঘদিন সরকারি চাকরি করেই জেলা প্রশাসক হন। তারমানে, তাকে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে এ জায়গায় আসতে হয়েছে। 

ঢাকা পোস্ট: চড়াই-উৎরাই পার হওয়ার দিনগুলোর গল্প শুনতে চাই...
ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি: যখন কোন নারী চাকরিতে আসেন তখন তার পাশের পুরুষরা ভাবে, সে কাজ করতে পারবে কি না কিংবা ঠিকভাবে সময় দিতে পারবে কি না! কিন্তু এখন মেয়েরা কাজ করতে-করতে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, নিজের অর্পিত দায়িত্ব একজন নারী ঠিকঠাকভাবে পালন করতে পারে। নারীরা যেহেতু স্বাভাবিকভাবে একটু ঠান্ডা ও ধৈর্যশীল হয়, এজন্য তারা কর্মক্ষেত্রে ভালোভাবে অবদান রাখতে পারে।  তবে একজন নারীকে অনেক  প্রতিকূলতা মাড়িয়ে এ পদে আসতে হয়। এজন্য পরিবারের যে পুরুষ সদস্য রয়েছেন তাদের সহযোগিতা জরুরি। যেমন বিবাহিত জীবনে চাকরি করতে গেলে তার স্বামীর সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। আর ছাত্রজীবনে বাবা-মায়ের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। তবে এখন মন-মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে, তারাও ইতিবাচকভাবে দেখছেন এবং এগিয়ে আসছেন। চাকরি জীবনের শুরুতে আমাকে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুরে পদায়ন করা হয়। তখন আমার স্বামী চাকরির জন্য চট্টগ্রামে থাকেন। এজন্য আশপাশের মানুষ অনেক সময় বলতো, আপনি আপনার স্বামীকে ছেড়ে এত দূরে কেন আসছেন? কিন্তু ওসব কথা কখনোই আমি কানে তুলিনি। আমাদের দেশের অনেক পুরুষ বিদেশে গিয়ে কাজ করছেন এবং তাদের স্ত্রী কিন্তু বাড়িতে একাই থাকছেন। সেখানে মেয়েদের কথাটা ওভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে না। 

ঢাকা পোস্ট: এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছেন? 
ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি: আমার স্বামী আমাকে সবসময় সহযোগিতা করেছেন। তিনি সহযোগিতা করেছেন বলেই আমি এতদূর এসে কাজ করতে পেরেছি। আশেপাশের মানুষ যতই তার জন্য মায়াকান্না করুক না কেন, উনি আমাকে সুযোগ দিয়েছেন বলেই আমি পিরোজপুরে তিন বছর কাজ করতে পেরেছি।

ঢাকা পোস্ট: আপনার পরিবার বিশেষ করে বাবা-মা কতটা সহযোগিতা করেছিল? 
ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজ : সফলতা তো আসলে এক সিঁড়ির বিষয় নয়। এটা অনেক সিঁড়ির বিষয়। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়, অনেক কষ্ট থাকে। এই সফলতার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য অর্থাৎ বাবা-মা, ভাই-বোনের সহযোগিতা থাকে। সহযোগিতা থাকে বলেই মানুষ সফলতা পায়। আমার পরিবারও সবসময় আমার পাশে ছিল। আমার যে লক্ষ্য ছিল, সে লক্ষ্য পূরণে আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে, এজন্যই আমি এ জায়গায় আসতে পেরেছি।

ঢাকা পোস্ট: বান্দরবানের প্রথম নারী জেলা প্রশাসক আপনি। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন আপনি? 
ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি: প্রথম নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করছি। ইতিহাসের পাতায় বান্দরবানের জেলা প্রশাসক হিসেবে আমার নাম লেখা থাকবে, এটা নিশ্চয়ই আমার জন্য অনেক আনন্দের বিষয়।

এসআর/এসকেডি