মানুষের বিশ্বাস অর্জনের পর বিভিন্নভাবে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন কথিত জিনের বাদশাহ। তার সঙ্গে কাজ করত ৪-৫ জনের আরেকটি প্রতারক চক্র। এদের মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি এ তথ্য জানায়।

গ্রেফতাররা হলেন- তারিকুল ইসলাম (জিনের বাদশা) (৪০), আব্দুল্লাহ বিশ্বাস (৩৩), আল মাসুম (২৮) ও সাইদুল ইসলাম (রাজু) (৩০)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেট কার, নগদ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, টাকা তৈরির সাদা কাগজসহ বাক্স, কিছু মাটি, লাল কালিতে আরবি লেখা কাগজ জব্দ করা হয়।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, ভুক্তভোগী আব্দুল খালেক খানের স্ত্রী ও সন্তান দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিল। এরমধ্যে তাদের পরিচয় হয় জিনের বাদশা তারিকুল ইসলামের সঙ্গে। যোগাযোগের এক পর্যায়ে জিনের বাদশা খালেককে বলেন, সে চিকিৎসা করতে পারবে। চিকিৎসার জন্য জিনের বাদশা কিছু ওষুধও দেয়। ওষুধে খালেকের স্ত্রী-সন্তান কিছুটা সুস্থ হয়। এরপরে জিনের বাদশার প্রতি খালেকের বিশ্বাস জন্মে।

একপর্যায়ে প্রতারক জিনের বাদশা খালেককে বলেন, যত দরকার তত টাকা জিনের বাদশা তৈরি করে দিতে পারবেন। প্রমাণ হিসেবে জিনের বাদশা খালেকের সামনেই একটি বালতির মধ্যে রাখা সাদা কাগজে এক হাজার একটি চকচকে নোট তৈরি করে দেয়। আরও বেশি বিশ্বাসের জন্য খালেক জিনের বাদশাকে বলেন, এটা তো নতুন নোট আপনি কিছু পুরাতন টাকা তৈরি করে দেখান। এরপর সে ওই বালতির মধ্যে কিছু পুরাতন টাকা তৈরি করে দেখায়। জাদুর মতো এমন ঘটনা দেখে খালেকের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়।

তিনি বলেন, শর্তসাপেক্ষে খালেকের চাহিদা অনুযায়ী জিনের বাদশা ৬ কোটি টাকা তৈরি করে দেবে। তবে শর্ত হচ্ছে পৃথিবীতে যতগুলো মসজিদ আছে সবগুলোতে একটি করে কোরআন শরীফ কিনে দিতে হবে। কোরআন শরীফগুলো কিনতে এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা লাগবে। চাহিদার ৬ কোটি টাকা একটি বাক্সে সাদা কাগজ দিয়ে তৈরি করে দেবে জিনের বাদশা।

তার কথায় বিশ্বাস করে বাজার থেকে ৬টি বাক্সের এ-ফোর সাইজের সাদা কাগজ কিনে আনেন খালেক। কাগজ কিনে আনার পর জিনের বাদশা বলেন, আপনারা যতদিন কোরআন শরীফ কেনার জন্য এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা দিতে পারবেন না ততদিন বাক্সটি খোলা যাবে না। এ কথায় বিশ্বাস করে আব্দুল খালেক বাক্সটি নিয়ে ঘরের এক কোনায় রেখে দেয়।

সিআইডির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, এমন প্রলোভনে আব্দুল খালেক দফায় দফায় এক কোটি ১৩ লাখ টাকা জিনের বাদশাকে দেয়। খালেকের পরিচিত একজন দেন আরও ৫৩ লাখ টাকা। যখন এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা হতে আরও দুই লাখ টাকা বাকি, তখন টাকার জন্য জিনের বাদশা চাপ দিতে থাকেন।

এক পর্যায়ে খালেকের সন্দেহ হলে তারা বাক্স খুলে দেখে ভেতরে সাদা কাগজ। এ সময় প্রতারক চক্রটি ঢাকা থেকে যশোরে গিয়ে বাকি দুই লাখ টাকা এসএ পরিবহনের মাধ্যমে পাঠাতে বলে। প্রতারক চক্রের বিষয়ে ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে সিআইডির ঢাকা মেট্রো-পশ্চিমের একটি দল ফাঁদ পেতে তাদের গ্রেফতার করে।

এআর/এমএইচএস