উত্তরা উত্তর স্টেশন ও আগারগাঁও স্টেশনে ৩৬ জন রোভার স্কাউট স্বেচ্ছাসেবী হিসেব কাজ করবেন/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে আজ মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়েছে। উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ি) থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার রেলপথের মাধ্যমে মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে দ্রুতগামী এ যোগাযোগ ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে সর্বসাধারণের জন্য চলবে মেট্রোরেল। তবে শুরুতে পুরোপুরি চলবে না। প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে চলবে, স্টেশনে ১০ মিনিট পরপর পাওয়া যাবে ট্রেন। শুরুতে প্রতি ট্রেনে ২০০ জন যাত্রী বহন করা হবে।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এ মেট্রোরেল যাত্রার প্রাথমিক অবস্থায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর পক্ষে কাস্টমার ফ্যাসিলেটর অ্যাসিস্ট্যান্ট (সিএফএ) হিসেবে সহযোগিতা করবেন রোভার স্কাউটের প্রশিক্ষিত সদস্যরা।

বাংলাদেশ স্কাউটসের রোভার অঞ্চল, নৌ অঞ্চল, এয়ার অঞ্চল ও রেলওয়ে অঞ্চলের ১৫০ জন রোভার স্কাউট সদস্য এবং রোভার স্কাউট লিডারদের ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব প্রশিক্ষিত রোভার স্কাউট সদস্যরা মানুষের যাত্রা সহজীকরণে প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতা করবেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তরা উত্তর স্টেশন ও আগারগাঁও স্টেশনে ৩৬ জন রোভার স্কাউট স্বেচ্ছাসেবী হিসেব কাজ করবেন।

ডিএমটিসিল সূত্রে জানা গেছে, রোভার স্কাউটদের মেট্রোরেল চত্বরে বহিরাগত অনুপ্রবেশ পর্যবেক্ষণ, মেট্রোরেলের সম্পত্তি চুরি বা ক্ষতি ঠেকানো, যাত্রী ও অন্যদের সহযোগিতা করা এবং মেট্রোরেল চত্বরে আগুন এবং অন্যান্য অনিরাপদ ঘটনার তাৎক্ষণিক সমাধান ও ক্ষতি হ্রাস করতে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে।

তাদের তাত্ত্বিক এবং সরেজমিনে প্ল্যাটফর্ম পরিদর্শন করানোর মাধ্যমে যাত্রীদের সেবায় প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। তবে বিশেষভাবে জনসাধারণের এবং মেট্রোরেলের সহকর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা এবং
অনভিপ্রেত যেকোনো ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমস্ত সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করার বিষয়টি বিশেষভাবে রোভার স্কাউট সদস্যরা নজরে থাকবেন।

ঢাকা জেলা রোভারের লিডার এবং এ কার্যক্রমের সমন্বয়ক তৌহিদুজ্জামান নিপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোভার স্কাউট সদস্যরা দেশের কল্যাণে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে সহযোগিতা করেন। মেট্রোরেল যেহেতু আমাদের দেশে প্রথমবারের মতো যাত্রা করেছে তাই সাধারণ মানুষ যেন বাহনটি সহজেই ব্যবহার করতে পারেন সেজন্য ডিএমটিসিএল এবং বাংলাদেশ স্কাউটসের যৌথ উদ্যোগে এসব রোভাররা কাজ করবেন। সেজন্য তিনটি ধাপে ইতোমধ্যেই ১৫০ জন রোভার স্কাউট সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ট্রেনিং সেন্টারে তাত্ত্বিক এবং মেট্রোরেলের স্টেশনে সরাসরি সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে রোভাররা প্রতিটি বিষয় সম্পর্কেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন অংশে তারা দায়িত্ব পালন করবেন। যেকোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ত্রুটি ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি যেমন, আগুন, ধোঁয়া, দুর্ঘটনা বা সিস্টেমের যে কোনো অংশের অবস্থার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এমন অবস্থায় দুর্ঘটনা রোধ করতে করণীয় সম্পর্কে বিশেষ ভাবে তারা প্রশিক্ষিত হয়েছেন।

এছাড়াও প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর, ট্রেন অপারেটরের বা চালকদের প্রবেশ ও প্রস্থানের দরজা, প্ল্যাটফর্মের শেষ দরজা, ইমার্জেন্সি এস্কেপ ডোরস, ফিক্সড প্যানেলসহ অন্যান্য অংশের যথাযথ ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত প্রাথমিক সহযোগীর ভূমিকা রোভার স্কাউট সদস্যরা পালন করবেন।

প্রাথমিক অবস্থায় এক মাসের জন্য রোভার স্কাউট সদস্যরা এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বলে জানান ঢাকা জেলা রোভারের সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি বলেন, রোভার স্কাউট সদস্যরা সেবার মূল মন্ত্রে দীক্ষিত। দেশের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে সেবা দিয়ে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রয়োজন সাপেক্ষে মেট্রোরেলেও ১৫০ জন সদস্য সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে এক মাসের জন্য তারা সহযোগিতার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। যদি পরবর্তীতে প্রয়োজন হয় তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রোভার স্কাউটদের এ সহযোগিতার সময় আরও বাড়ানো হবে।

উল্লেখ্য, ডিপো থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার আদর্শ-গেজ (এক হাজার ৪৩৫ মিলিমিটার) রেলপথে মোট স্টেশন থাকছে ১৭টি। স্টেশনগুলো হচ্ছে, উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, মতিঝিল ও কমলাপুর। বর্তমানে প্রথম পর্যায়ে উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এটি চলবে।

আরএইচটি/এসকেডি