রাজধানীর উত্তরা থেকে পান্থপথে গিয়ে অফিস করেন মনিরুল ইসলাম। গণপরিবহনে প্রতিদিন অফিসে যেতে তার সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। আজ মেট্রোরেলে চড়ে অফিসে যাবেন তিনি। তাতে সময় ও পরিশ্রম দুটোই বাঁচবে।

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে উত্তরা উত্তরা স্টেশনের লাইনে দাঁড়িয়েছেন মনিরুল। সকাল সোয়া ৯টা বাজলেও স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। তাই নির্ধারিত সময়ে অফিসে যেতে পারছেন না তিনি।

জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, আরও আধা ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে ভেতরে ঢুকতে। তারপর টিকিট কাটতে হবে, সেখানেও লাইন, আজ মনে হচ্ছে না নির্ধারিত সময়ে অফিসে যেতে পারব। অফিসে যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লেট হবে।

তিনি বলেন, আজ মেট্রোরেলের প্রথম দিন, তাই একটু সমস্যা হচ্ছে। আশা করি, আগামী দিনে এ সমস্যা থাকবে না। তারপরও আমি মেট্রোতেই চড়ব।

মনিরুল ইসলামের মতো রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনে যেতে শত শত কর্মজীবী ও উৎসুক যাত্রী লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। তারা বলছেন, কষ্ট হলেও মেট্রোরেলে চড়বেন।

নিরাপত্তা কর্মী সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই ১০ জন করে যাত্রীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। তবে ৯টার পর থেকে ২০ থেকে ৩০ জন করে ঢুকতে দিচ্ছি।

এ বিষয়ে উত্তরা উত্তর স্টেশনের দায়িত্বরত সহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, মানুষকে মেট্রোর প্রসেস সম্পর্কে জানাতে, বোঝাতে একটু সময় লাগছে। ভেতরে ঢোকার পর টিকিট সংগ্রহ করার কাজ খুবই ধীরগতিতে চলছে। কারণ সব মানুষ এ বিষয়ে জানে না, অভ্যস্ত না। সে কারণেই এই বিলম্ব হচ্ছে। মূলত শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ধীরগতির কারণে এটা হয়েছে। এর সমাধান হতে দুই-একদিন সময় লাগবে।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম যাত্রা শুরু করে স্বপ্নের মেট্রোরেল। এর প্রথম যাত্রী হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে টিকিট কেটে মেট্রোরেলে ওঠেন তিনি। এসময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও তার সঙ্গে ছিলেন। এই ট্রেনের চালক হিসেবে ছিলেন মরিয়ম আফিজা নামে এক নারী। মুক্তিযোদ্ধা, প্রাথমিক শিক্ষার্থী, নৃগোষ্ঠী, কূটনীতিক, মন্ত্রীসহ আমন্ত্রিত ২০০ জন প্রধানমন্ত্রীর সহযাত্রী ছিলেন।

ঢাকার যানজট নিরসনে মেট্রোরেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে লক্ষ্যে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) গঠন করা হয়। এই কোম্পানির মাধ্যমে প্রথম প্রকল্প নেওয়া হয় ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-৬। যা এমআরটি-৬ নামে পরিচিত। প্রকল্পটি উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করা হয়েছে।

এই অংশের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ১০ মিনিট অন্তর চলবে এই মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কোনো স্টেশনে না থেমে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১০ মিনিট এবং স্টেশনগুলোতে থেমে থেমে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১৭ মিনিট।

প্রাথমিক পর্যায়ে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। এতে নারীদের জন্য আলাদা কোচের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য স্কেলেটর, লিফটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কেউ অসুস্থ হলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হবে।

এমআই/এসএসএইচ/