প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ, ট্রেনে উঠা, স্টেশন থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় টিকিট পাঞ্চসহ সার্বিক বিষয়ে যাত্রীদের সহযোগিতা করেছেন রোভার স্কাউটের সদস্যরা/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

অপেক্ষা ছিল মেট্রোরেল উদ্বোধনের। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত স্বপ্নের মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পেরেছেন যাত্রীরা। তবে প্রথমবারের মতো স্বপ্নময় মেট্রোরেলে উঠতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে উৎসুক যাত্রীদের।

এরপর স্টেশনে ঢুকে টিকিট সংগ্রহ, সঠিক নির্দেশনা,  মেট্রো রেলে ভ্রমণ সবকিছুই ছিল যাত্রী সাধারণের কাছে একেবারে নতুন বিষয়। আর না জানা এসব যাত্রীদের পুরো সময় ধরে সেবা দিয়েছেন রোভার স্কাউট সদস্যরা।

মেট্রোরেল যাত্রার প্রাথমিক অবস্থায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষে কাস্টমার ফ্যাসিলেটর অ্যাসিস্ট্যান্ট (সিএফএ) হিসেবে সহযোগিতা করেছেন রোভার স্কাউটের প্রশিক্ষিত সদস্যরা। তারা মূলত যাত্রীদের টিকিট সংগ্রহ, পাঞ্চ করে প্ল্যাটফর্মের দিকে প্রবেশ, ট্রেনে উঠার পথ, স্টেশন থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় টিকিট পাঞ্চ করাসহ সার্বিক বিষয়ে যাত্রীদের সহযোগিতা করেছেন।

উত্তরা উত্তর স্টেশনের দায়িত্বপালন করা রোভার স্কাউট সদস্য রাশেদুল আলম বলেন, আমরা যাত্রীদের টিকিটি সংগ্রহ করতে সহযোগিতাসহ পথ দেখানো, টিকিট পাঞ্চ জাতীয় নানা সহযোগিতা করেছি। এসব বিষয়ে আমাদের আগেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

রোভার স্কাউট সদস্যদের সেবায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে আসা জাহিদুর রহমান বলেন,  রোভার স্কাউট সদস্যরা যাত্রীদের খুবই সহযোগিতা করছেন। আমাদের কাছে মেট্রোরেলের স্টেশন, রেল পুরো বিষয়টাই একেবারে নতুন। কিন্তু তারা আমাদের সব শিখিয়ে দিচ্ছেন, সার্বিক সহযোগিতা করছেন। স্কাউট সদস্যরা এখানে দায়িত্বপালন করায় যাত্রীদের খুবই উপকার হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ স্কাউটসের রোভার অঞ্চল, নৌ-অঞ্চল, এয়ার অঞ্চল ও রেলওয়ে অঞ্চলের ১৫০ জন রোভার স্কাউট সদস্য এবং রোভার স্কাউট লিডারদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব প্রশিক্ষিত রোভার স্কাউট সদস্যরা মানুষের যাত্রা সহজীকরণে প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতা করেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তরা উত্তর স্টেশন ও আগারগাঁও স্টেশনে ৩৬ জন রোভার স্কাউট স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন। রোভার স্কাউটদের মেট্রোরেল চত্বরে বহিরাগত অনুপ্রবেশ পর্যবেক্ষণ, মেট্রোরেলের সম্পত্তি চুরি বা ক্ষতি ঠেকানো, যাত্রী ও অন্যদের সহযোগিতা করা এবং মেট্রোরেল চত্বরে আগুন এবং অন্যান্য অনিরাপদ ঘটনার তাৎক্ষণিক সমাধান ও ক্ষতি হ্রাস করতে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়াও প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর, ট্রেন অপারেটরের বা চালকদের প্রবেশ ও প্রস্থানের দরজা, প্ল্যাটফর্মের শেষ দরজা, ইমার্জেন্সি এস্কেপ ডোরস, ফিক্সড প্যানেলসহ অন্যান্য অংশের যথাযথ ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত প্রাথমিক সহযোগীর ভূমিকা রোভার স্কাউট সদস্যরা পালন করছেন।

এদিকে গতকাল (বুধবার) মেট্রোরেলের উদ্বোধনের মাধ্যমে রাজধানীবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি যোগাযোগব্যবস্থার নতুন অধ্যায় সূচিত হয়। এরপর আজ সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় মেট্রোরেল।

আগারগাঁও ও উত্তরা উত্তর স্টেশনে শীতের সকালে ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোর থেকেই ছিল মানুষের লম্বা লাইন। কিন্তু প্রথম দিনেই এতো মানুষের ভিড়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্টেশনে ধীর গতিতে যাত্রী ঢুকিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। ফলে স্টেশনের বাইরে অপেক্ষমাণ যাত্রীর সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘায়িত হয়েছে। এরপর এসেছে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত, স্বপ্ন ছোঁয়ার সেই ক্ষণ, অর্থাৎ মেট্রোরেলে প্রথমবারের মতো উঠতে পারার তৃপ্তি। সেই ক্ষণের সাক্ষী হতে কেউ এসেছিলেন পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধু বান্ধব ও প্রিয়জনকে নিয়ে। কিন্তু প্রথম দিনে বেশিরভাগেরই মেট্রোরেলে চড়ার সুযোগ হয়নি। শেষে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন তারা। কারণ প্রথম দিনে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্তই ছিল মেট্রোরেলের প্রথম সার্ভিসটি।

এএসএস/এসকেডি