ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বৈশ্বিক মেরুকরণ, ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকবিলাসহ নানা কারণে ২০২৩ সালকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সরকার। বৈশ্বিকভাবে নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ সামনে এলে, সেগুলো মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বছরের শুরুর দিন বিদেশে বাংলাদেশের মিশনপ্রধান তথা রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনারদের নিয়ে বৈঠকে বসছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ভার্চুয়াল বৈঠক রোববার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে। ৮১ মিশনের প্রধানদের নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনও থাকবেন বৈঠকে।

আরও পড়ুন : শাহীনবাগে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত!

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সব রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনারদের বৈঠকের বিষয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিব দূতদের সঙ্গে আলাপ করবেন। আলোচনায় কোন বিষয়গুলো আসতে পারে -এমন প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, নানা বিষয় নিয়ে আলাপ হতে পারে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিব দূতদের দিকনির্দেশনা দেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

বিদেশি মিশনে দায়িত্বরত দূতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুব কম সময়ের নোটিশে বছরের শুরুর দিনে বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বার্তা পেয়েছেন। নির্দিষ্ট করে কোনো বার্তা না পেলেও দূতরা মনে করছেন, করোনা মহামারির প্রভাবের পর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিকভাবে যে মেরুকরণের সৃষ্টি হয়েছে, এতে করে প্রতিনিয়ত কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। বাংলাদেশকেও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি বৈশ্বিক রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। নতুন বছরে পুরোনা এসব চ্যালেঞ্জ ছাড়াও নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ সামনে এলে দূতদের মোকাবিলা করার বার্তা দেবে মন্ত্রণালয়।

আরওপড়ুন : বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকতা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে : মার্কিন রাষ্ট্রদূত

বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক হাইকমিশনার বলেন, হঠাৎ করেই আমাদের সিদ্ধান্তটা জানানো হয়েছে। কি বিষয়ে আলোচনা হবে তা আগে থেকে বলা মুশকিল। তবে ধারণা করছি, বৈশ্বিক অস্থিরতা মোকাবিলায় দূতদের সজাগ থাকার বার্তা আসতে পারে।

আরেক রাষ্ট্রদূত জানান, বিভিন্ন দিকনির্দেশনা আসতে পারে বলে মনে হচ্ছে। হয়তো মিশন প্রধানদের আরও সক্রিয় থাকার বার্তা দেবেন মন্ত্রী।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনে সব মিশন প্রধানের সঙ্গে আমাদের আলাপ হবে। ৮১ মিশনের সঙ্গে আলাপ করব। ভবিষ্যতে আমরা কী করতে করতে পারি, এটা নিয়ে কথা হবে।

আরও পড়ুন : মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বিতর্কিত করা হয়েছে : তথ্যমন্ত্রী

কী বার্তা দেওয়া হবে দূতদের- জানতে চাইলে মোমেন বলেন, অনেক বার্তা আছে। আগে তাদের সঙ্গে আলাপ করি। স্মার্ট বাংলাদেশের একটি পরিকল্পনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এটা অর্জন করতে হলে আমাদের মিশন প্রধানরা কী কাজ করতে পারবেন, কীভাবে অর্জন করবেন এসব বহু খুটিনাটি বিষয় আছে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কূটনীতির কতদূর হলো, কি পর্যায় আছে; আপডেট চাই। আমাদের জন কূটনীতির আপডেট নিতে চাই। এসব একাধিক ইস্যু নিয়ে আমরা আলাপ করব।

বৈঠকের বিষয়ে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন বছর তথা ২০২৩ সাল খুব গুরত্বপূর্ণ বছর। এ সময়ে কূটনৈতিকভাবে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে বাংলাদেশ। বৈশ্বিকভাবে যুক্ত হতে পারে আরও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঠিক রাখা, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো, নতুন বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসাসহ দূতদের আরও সক্রিয় থাকার বার্তা দেওয়া হবে।

কূটনৈতিক সূত্র আরও বলছে, বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার ও নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের পরামর্শে বিরক্ত সরকার। পাশাপাশি বাংলাদেশ নিয়ে পরাশক্তিদের টানাটানি কিংবা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশে বসে দেশ-বিরোধী প্রচারণা বন্ধে দূতদের কাছ থেকে আরও বেশি সহযোগিতা ও সক্রিয় থাকার পরামর্শ দেওয়া হবে।

এনআই/এসএম