পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার (ছবি: সংগৃহীত)

আদালতের আদেশে মামলা রুজু হয়, আদেশ অনুযায়ী বাদী হন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। সেই মামলায় এজাহার জমা নেয়নি পুলিশ। এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায়। পরে আদালতের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান থানার ওসি নাজিম উদ্দিন। আইনজীবীরা বলছেন, এজাহার ছাড়া মামলা দায়েরের কোনো সুযোগ নেই। এতে আইনগত ত্রুটি থেকে যায়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল মেয়ের অপহরণের অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নালিশি মামলা দায়ের করেন হোসনে আরা বেগম (৩৭) নামে এক নারী। 

মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, ৯ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। এরপর থেকে তিনি অর্থকষ্টে দিনযাপন করেন। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার ১১ বছর বয়সী মেয়ে রাশেদা আক্তার নিখোঁজ হয়। ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল হোসনে আরা জানতে পারেন মো. রাশেদ ও তার স্ত্রী ফারজানা রাশেদাকে তাদের কাছে আটকে রেখেছেন এবং তারা রাশেদাকে দিয়ে অমানবিক কাজ করাচ্ছেন।

মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্তের আদেশ দেন আদালত। এরপর মামলাটি তদন্ত করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহেদুজ্জামান চৌধুরী। 

তার তদন্তে উঠে আসে ভিন্ন তথ্য। তদন্তে জানা যায়, রাশেদাকে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করতেন তার মা হোসনে আরা। বেশি পরিমাণে ভিক্ষা পাওয়ার আশায় রাশেদার গায়ে পলিথিন পুড়িয়ে ছ্যাঁকা দিতেন তার মা। এক পর্যায়ে ছেলের চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে রাশেদাকে একটি বাড়িতে কাজ করতে দেন হোসনে আরা। সেখানে ভালোভাবে জীবনযাপন করছিল রাশেদা। কিন্তু রাশেদাকে আবারও ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানোর চেষ্টা করেন মা হোসনে আরা। নালিশি মামলার অভিযুক্তরা (মো. রাশেদ ও তার স্ত্রী) তাতে বাধা দেন। এ কারণে হোসনে আরা আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে আদালতে একই ধরনের জবানবন্দি দেয় ভুক্তভোগী রাশেদাও।

পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত বছরের ১৭ অক্টোবর মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগে মা হোসনে আরার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে পাঁচলাইশ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত। আদেশে একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মর্যাদার কর্মকর্তাকে বাদী হতে বলা হয়। একইসঙ্গে পরিদর্শক মর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত।

আদালতের আদেশ পেয়ে গত বছরের ১৯ নভেম্বর মামলাটি দায়ের করা হয়। পাঁচলাইশ থানার এসআই নুরুল আলম মামলাটির বাদী হন। তবে এই মামলার কোনো এজাহার জমা দেননি তিনি। শুধু প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর) ফরম পূরণ করে আদালতে জমা দেওয়া হয়। পাঁচলাইশ থানার এসআই-ওসির এমন অপেশাদারি কার্যক্রম সমালোচনার জন্ম দেয়। 

গত মাসে প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে আদালতের কাছে ক্ষমা চান ওসি। একইসঙ্গে নতুন করে লেখা একটি এজাহার জমা দিয়ে সেটি মামলার নথিতে সংযুক্ত করার আবেদন করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে থানায় কর্মরত এসআই ও মামলার বাদী নুরুল আলম মিয়া বুধবার (৪ জানুয়ারি) ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতের আদেশকে এজাহার হিসেবে গণ্য করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। আলাদা করে কোনো এজাহার সেজন্য দেওয়া হয়নি। আদালতের আদেশেও এজাহার দেওয়ার কথা উল্লেখ ছিল না। এজন্য ওসি ও ওসি তদন্ত এজাহার দেননি। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলে পরবর্তীতে আলোচনা সাপেক্ষে এজাহার দেওয়া হয়।

মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার আজ সকালে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এজাহার না থাকায় তদন্তের কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। তবে আইনগত একটু ত্রুটি থেকে যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে পাঁচলাইশ থানার ওসি পুনরায় আদালতে এজাহার জমা দিয়েছেন। সেই এজাহার আমরা পেয়েছি। মামলাটির তদন্ত মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। আসামিকে গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা চলছে। আশা করি তাকে শিগগিরই আইনের আওতায় আনা যাবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খাঁন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলা গ্রহণের নিয়ম হচ্ছে প্রথমে এজাহার নিতে হবে। তারপর এজাহার অনুযায়ী ওসি এফআইআর ফরম পূরণ করবেন। যদি এজাহার না নেয় তবে সেটি মামলাই হয়নি। মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে ওসিকে আরও সতর্ক হতে হবে।

কেএ