দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয় | ছবি- ঢাকা পোস্ট

ভুয়া জন্মসনদ ও জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিক হাফিজ আহমেদ পান বাংলাদেশি পাসপোর্ট। এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশনের তথ্য উপেক্ষা করে পাসপোর্ট দেয় অধিদফতরের একটি শক্তিশালী চক্র। সেই চক্রের হোতাদের খোঁজে ২০১৯ সাল থেকে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ধারাবাহিকভাবে পাসপোর্ট অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত নিয়ে চলছে সংস্থাটির গোয়েন্দা তৎপরতা।

দুদকের ধারাবাহিক অনুসন্ধানে এরই মধ্যে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ভূঞা ও তার স্ত্রী শাফিনাজ আক্তারের অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তাদের সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বসুন্ধরায় ২২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং বাড্ডায় প্রায় ১০ শতাংশ জমি।

দুদকের ধারাবাহিক অনুসন্ধানে এরই মধ্যে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ভূঞা ও তার স্ত্রী শাফিনাজ আক্তারের অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তাদের সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বসুন্ধরায় ২২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং বাড্ডায় প্রায় ১০ শতাংশ জমি

নজরুল দম্পতির দেওয়া নথি ও বিভিন্ন রেকর্ডপত্রের ভিত্তিতে পাওয়া ফ্ল্যাট ও জমিসহ সব সম্পদের দালিলিক মূল্য দুই কোটি টাকার মতো। দুদকের অনুসন্ধান বলছে, তাদের সম্পদের প্রকৃত মূল্য দালিলিক মূল্যের চেয়ে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি। যে কারণে সম্পদের হিসাব চাওয়ার অনুমতি চেয়ে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে অনুসন্ধান টিম। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে সম্পদবিবরণী নোটিশ ইস্যু করা হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস

দুদক উপপরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম নজরুল দম্পতির সম্পদ অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও উপসহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন পরিচালক আকতার হোসেন আজাদ।

সম্প্রতি অনুসন্ধান প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আমরা পাসপোর্ট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের কোনো ছাড় দেব না

আকতার হোসেন আজাদ, পরিচালক, দুদক

এ বিষয়ে দুদক পরিচালক আকতার হোসেন আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্প্রতি অনুসন্ধান প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আমরা পাসপোর্ট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের কোনো ছাড় দেব না।

দুদক ও পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর শাফিনাজ আক্তার একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোড্ডায় তাদের স্থায়ী নিবাস। নজরুল ইসলাম ২০১২ সালে সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধান ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নজরুল ইসলামের নামে ছয় লাখ ৫১ হাজার ৭৫০ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং ৪৫ লাখ ৭৫ হাজার ২৬১ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৫২ লাখ ২৭ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। 

অন্যদিকে, একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত তার স্ত্রী শাফিনাজ আক্তারের নামে ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৩৭ লাখ ৯০ হাজার ১১৬ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট এক কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ১১৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য মিলেছে দুদকের অনুসন্ধানে। তবে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের বিষয়ে গ্রহণযোগ্য রেকর্ডপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি নজরুল দম্পতি। আয়কর নথিসহ বিভিন্ন রেকর্ডপত্রে যে সম্পদের মূল্য নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী দেখিয়েছেন বাস্তবে এর মূল্য অনেক বেশি। ওই সম্পদ ছাড়া তাদের নামে আরও অবৈধ সম্পদ থাকতে পারে বলে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তাদের কাছে মনে হয়েছে। এজন্য তাদের সম্পদের সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (১) ধারায় পৃথক সম্পদবিবরণী নোটিশ জারির সুপারিশ করেছে অনুসন্ধান টিম।

নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- রাজধানী বাড্ডার কাঁঠালদিয়া মৌজায় অবস্থিত প্রায় ১০ শতাংশ জমি। যেখানে নজরুল জমির দালিলিক মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ছয় লাখ ৫১ হাজার ৭৫০ টাকা। অন্যদিকে, তার স্ত্রী শাফিনাজ আক্তারের নামে বসুন্ধরার ডি ব্লকে ২২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে। যা তার নামে ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল (দলিল নং-৫২১৮) করা। এর মূল্য দেখানো হয়েছে ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। টাকার উৎস হিসেবে তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ দেখিয়েছেন। তবে ২২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মূল্য প্রকৃতপক্ষে অনেক বেশি বলে মনে করে দুদক

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন অনুসারে, নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- রাজধানী বাড্ডার কাঁঠালদিয়া মৌজায় অবস্থিত প্রায় ১০ শতাংশ জমি। যেখানে নজরুল জমির দালিলিক মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ছয় লাখ ৫১ হাজার ৭৫০ টাকা। অন্যদিকে, তার স্ত্রী শাফিনাজ আক্তারের নামে বসুন্ধরার ডি ব্লকে ২২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে। যা তার নামে ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল (দলিল নং-৫২১৮) করা। এর মূল্য দেখানো হয়েছে ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। টাকার উৎস হিসেবে তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ দেখিয়েছেন। তবে ২২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মূল্য প্রকৃতপক্ষে অনেক বেশি বলে মনে করে দুদক।

রাজধানীর দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয় | ছবি- ঢাকা পোস্ট

অন্যদিকে, অস্থাবর সম্পদের বর্ণনায় নজরুল ইসলাম নয় লাখ ২৭ হাজার ৭৯৯ টাকা সঞ্চয়, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ, আসবাবপত্রসহ মোট ৪৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। স্ত্রী শাফিনাজ আক্তার ডিপিএস ২৫ হাজার টাকা, ২১ লাখ টাকার গাড়ি, চার লাখ টাকার স্বর্ণালংকার, ১০ লাখ টাকার ঋণসহ ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। এসব সম্পদ অর্জন এবং এর সঙ্গে সরবরাহ করা নথিপত্রের সঙ্গে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধান টিম মনে করে।

গত ৬ জানুয়ারি অবৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. নজরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। তবে জিজ্ঞাসাবাদে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। একই অভিযোগে পাসপোর্ট অধিদফতরের ডজনখানেক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই।আমার যতটুকু সম্পদ অজর্ন করেছি তা ঋণের টাকায় (ব্যাংক লোন)। আমি এবং আমার স্ত্রী দুজনেই চাকরিজীবী।

২০২০ সালের ১২ মার্চ ভারতীয় নাগরিককে পাসপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সাবেক সহকারী পরিচালক আবজাউল আলম, ভারতীয় নাগরিক হাফিজ আহমেদ, রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী রঞ্জা লাল সরকার, হুমায়ুন কবির, দেলোয়ার হোসেন, আটমাস উদ্দিন, ইব্রাহিম হোসেন ও আবদুল ওয়াদাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় নাগরিক হাফিজ আহমেদ ভুয়া জন্মসনদ ব্যবহার করে পাসপোর্টের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন। এরপর পুলিশ ভেরিফিকেশনে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে রিপোর্ট দেওয়ার পরও পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে তাকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়া হয়।

আরএম/এমএআর/