স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধ্বংস করার জন্য সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এদের সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসোপানে এগিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ধারা যেকোনো মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আলোচনা সভায় বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সামাদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান, ক্যাপিটেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসান রহমান, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, বীর উত্তম খালেদ মোশাররফের ছোট বোন রীণা মোশাররফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, ভাস্কর শিল্পী রাশা, উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন রোজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যসহ প্রমুখ নেতারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সামাদ বলেন, পাকিস্তানের কারাগারে গোপনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সকল প্রকার আয়োজন সম্পন্ন করেছিলেন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এ ঘটনা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তির জন্য পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে চাপ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ৬৭টি দেশের সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিঠি দেন। অন্যদিকে তিনি ইউরোপের পাঁচটি দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করে বিশ্বজনমত বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অনুকূলে আনতে সক্ষম হন। ফলে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার পক্ষে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পান। একটি পাকিস্তান সামরিক বিমানে খুব গোপনে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। লন্ডনে সময় তখন ভোর ৮টা ৩০ মিনিট, ৯ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল। স্বদেশে ফেরার জন্য বঙ্গবন্ধু ওঠেন ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বহরের কমেট জেটে। বাংলাদেশে ফেরার পথে বিমানটি দুই ঘণ্টার যাত্রা বিরতি করে দিল্লিতে। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান।

সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, তেজগাঁও বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করার পর খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে জনসমুদ্রের ভেতর দিয়ে রেসকোর্স ময়দানে এসে পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। সেদিনকার রেসকোর্স ময়দান ছিল লোকে লোকারণ্য। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৭ মিনিট জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। যা ছিল জাতির জন্য দিকনির্দেশনা। বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে, রাষ্ট্র কাঠামো কী ধরনের হবে, পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে যারা দালালি ও সহযোগিতা করেছে তাদের কী হবে, বাংলাদেশকে বহির্বিশ্ব স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ, মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ, কৃষক, শ্রমিকদের কাজ কী হবে, এসব বিষয়সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে নির্দেশনা।

আলোচনা সভা শেষে অতিথিদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা।

ওএফএ/এসএসএইচ/