চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশের সঙ্গে কিডনি ডায়ালাইসিস রোগী ও তাদের স্বজনদের সংঘর্ষ/ ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পুলিশের সঙ্গে কিডনি ডায়ালাইসিস রোগী ও তাদের স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের বাড়াবাড়িকে দায়ী করছেন রোগীর স্বজন ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, ওসি অতিরিক্ত মারমুখী না হলে এ ঘটনা ঘটত না। 

কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরমধ্যে একটিতে মুস্তাকিম নামে এক যুবককে পেটাতে দেখা যায় পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনকে। একতরফা মারধরের এ চিত্র সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

পুলিশ বলছে, তাদের মারমুখী হতে বাধ্য করেছে বিক্ষোভকারীরা। আবার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ওসি চাইলে কৌশলে বুঝিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরাতে পারতেন।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও কয়েকজন বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছিলেন কিডনি রোগী ও তাদের স্বজনরা। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকালে তারা হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। 

এসময় রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া থেকে আহত পুলিশ সদস্যদের আনার খবরে হাসপাতালে আসছিলেন চট্টগ্রাম পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা।

রোগীদের আন্দোলন দেখে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদার গাড়ি থেকে নামেন। তিনি আন্দোলনকারীদের সড়ক ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন।

বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে ওসি নাজিম উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি নিজের মুঠোফোন দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ভিডিও করেন এবং তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। এতে রোগী ও স্বজনরা ক্ষুব্ধ হন এবং ভিডিও ডিলিটের দাবি জানান। 

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার সময় ওসির মোবাইল সরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন গ্রেপ্তার হওয়া মুস্তাকিম। এতে ওসির মোবাইলটি মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। এরপর ওসি মারমুখী হয়ে ওঠেন। তিনি মুস্তাকিমকে পেটাতে পেটাতে চমেকের প্রধান ফটকের বিপরীতে এপিক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও তাকে আরেক দফা মারধর করেন ওসি।

এসময় অন্য পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোকারীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চমেকের সামনের এক দোকানদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুক্তভোগীরা কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন। কিন্তু তাদের দাবি আদায় হচ্ছে না। থানার ওসি একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তিনি চাইলে কৌশলে বুঝিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরাতে পারতেন। তা না করে তিনি বিক্ষোভকারীদের ভিডিও করেন। এতে বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এসময় ওসি তাদের ওপর হামলা চালান। 

সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয় মুাস্তকিমকে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়।

চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান বুধবার ঢাকা পোস্টকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা যতগুলো ভিডিও ফুটেজ দেখেছি, সেখানে পুলিশকে হামলা করতে দেখা গেছে। এখন পুলিশ উল্টো মানবিক আন্দোলন থেকে একজনকে ধরে এনে মামলা এবং রিমান্ড আবেদন করেছে। যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার মা কিডনি রোগী। তিনি তার মায়ের একমাত্র সন্তান। এখন তার মাকে ডায়ালাইসিস করাবে কে?’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের ক্ষমতার এত অপব্যবহার করাটা উচিৎ হয়নি। ছেলেটার রিমান্ড আবেদন করায় আমরা জামিন শুনানিও করতে পারিনি। আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মুস্তাকিমকে বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে পাঁচলাইশ থানার ওসিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশ উত্তর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আরফাতুল ইসলাম বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছিল। এটি হাসপাতালের প্রধান সড়ক। এছাড়া ওসির মারধরের আগের দৃশ্য দেখলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। সবাই শেষের দৃশ্য নিয়ে সমালোচনা করছে। তারপরও আপনাদের যদি মনে হয় ওসি বাড়াবাড়ি করেছেন তবে তার কাছ থেকে বক্তব্য নিন।’

চমেক হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার পরিচালনা করে ভারতের প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর। প্রতিষ্ঠানটি এতদিন সরকারিভাবে প্রতি সেশনে ৫১০ টাকা এবং বেসরকারিভাবে ২ হাজার ৭৯৫ টাকা করে ফি নিয়ে আসছিল। কিন্তু এখন সেটা সরকারিভাবে ৫৩৫ টাকা এবং বেসরকারিভাবে ২ হাজার ৯৩৫ টাকা করা হয়েছে। এ মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগীরা আন্দোলনে নামেন।

এমজে/জেএস