ছুটি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক কর্মকর্তা পাড়ি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, আরেকজন কানাডা। দু’জনের বিরুদ্ধেই ছিল দুর্নীতির অভিযোগ। এবার আরেক কর্মকর্তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে বেবিচক।

ওই কর্মকর্তার নাম মো. মাহবুব আলম। তিনি যশোর বিমানবন্দরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মাহবুব আলমের সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর। তাকে বদলি করে যশোরে পাঠানো হয়। নতুন কর্মস্থলে যোগদানের আগে তিনি ৫ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। তবে ১২০ দিন পেরিয়ে গেলেও ছুটি থেকে ফেরেননি তিনি। ফোন, এসএমএস এবং চিঠিও দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে বেবিচক।

বেবিচকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাহবুব ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৫ দিনের নৈমিত্তিক ছুটির (ক্যাজুয়েল লিভ) নিয়ে নিজ বাড়ি পাবনায় যান। কিন্তু ২ মাসেও তার কর্মস্থলে ফেরেননি। এবিষয়ে ২২ নভেম্বর তাকে নিজ অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য তলব করে বেবিচক। তার বাসায় চিঠি পাঠানো হয়, ম্যাসেজ দেওয়া হয় হোয়াটসঅ্যাপে। ৭ দিনের মধ্যে আসতে বলা হলেও আসেননি তিনি।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) তার বিরুদ্ধে মামলা করে বেবিচক। মামলা করেন বেবিচকের সদস্য (প্রশাসন) মো. মাহবুব আলম তালুকদার। মামলার কপি ঢাকা পোস্টের কাছে রয়েছে। তবে এ বিষয়ে মামলাকারী কথা বলতে রাজী হননি। 

মামলার অভিযোগপত্রে তার দীর্ঘমেয়াদের অনুপস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, মাহবুব আলমের কার্যকলাপ ২০২১ এর ৪৯ (খ) ও (গ) বিধি অনুযায়ী যথাক্রমে ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’-এর পর্যায়ভুক্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বেবিচকের কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২১ এর ৪৯ (খ) ও (গ) বিধি অনুযায়ী যথাক্রমে ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’-এর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলো। একই বিধিমালার ৫০(১)(খ)(উ) বিধি অনুযায়ী কেন আপনার ওপর “চাকরি হতে বরখাস্তকরণ” গুরুদণ্ড আরোপ করা হবে না অথবা অন্য কোনও উপযুক্ত দণ্ড দেওয়া হবে না তা ওই বিধিমালার ৫৩(১)(খ) বিধি অনুযায়ী এ অভিযোগনামা প্রাপ্তির ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে সরাসরি লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলা হলো। আত্মপক্ষ সমর্থনে আপনি সশরীরে ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশগ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করেন কিনা তাও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

এবিষয়ে জানতে মাহবুব আলমের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তা ‘ব্যবহৃত হচ্ছে না’ বলে জানা গেছে।

মাহবুব আলমের অনুপস্থিতির কারণ না জানা গেলেও বেবিচক সূত্র জানায়, তার বিরুদ্ধে রাজশাহী বিমানবন্দরে থাকাকালীন চারটি পুকুর ভরাট, পার্কিংয়ের ঢালাই, স্যানিটারি ফিটিংস লাগানোর কাজের অনিয়ম করার অভিযোগ রয়েছে। 

এর আগেও বেবিচকের দুই কর্মকর্তার পলায়নের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে একজন বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. শহীদুজ্জামান। তিনি ২০২১ সালের শুরুর দিকে ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আর ফেরেননি। একাধিকবার নোটিশ দিয়েও তাকে কর্মস্থলে ফেরত আনা যায়নি। পরে বাধ্য হয়ে শহীদুজ্জামানকে বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে বেবিচকের বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডার বাণিজ্যের মাধ্যমে অন্তত ১০০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে।

বেবিচকের আরেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আব্দুল খালেকও কানাডায় পাড়ি দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছিল। তাকেও চাকরি থেকে বরখাস্ত করে বেবিচক।

এআর/এসএম