দীর্ঘ ছয় বছর পর আগামী মার্চে জানা যাবে দেশের দারিদ্রের হার। এর আগে, সর্বশেষ ২০১৬ সালে ‘হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের (হায়েস)’ মাধ্যমে দেশের দারিদ্রের হার জানা গিয়েছিল। ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার হয়েছিল ২৪.৩ শতাংশ। 

এবারের দারিদ্রের হার নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ সার্ভেটি পরিচালনা করছে।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস সম্মেলন কক্ষে বিবিএসের মাধ্যমে পরিচালনাধীন হেইজ-২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদনের ট্যাবুলেশন প্লান শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। 

এতে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ফারুক আহম্মেদ ও অতিরিক্ত সচিব (তথ্য ব্যবস্থাপনা) ড. মো মইনুল হক আনছারী।

কর্মশালায় বাংলাদেশে হেইজ জরিপের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, নমুনায়ন পদ্ধতি, হেইজের নতুনত্ব, সম্পাদিত কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে উপস্থাপনা প্রদান করেন হেইজ ২০২০-২১ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ। কর্মশালার টেকনিক্যাল সেশনে হেইজ জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদনের ট্যাবুলেশন প্লানের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। টেকনিক্যাল সেশন সঞ্চালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্মসচিব (উন্নয়ন) ড. দিপংকর রায়।

প্রকল্পের পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, চলতি বছরের ৩১ মার্চ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে দেশের সার্বিক দারিদ্রতার হার। ২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর দেশব্যাপী ৭২০টি নমুনা এলাকার ১৪ হাজার ৪০০টি নমুনা খানায় হেইজ জরিপের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। রিপোর্ট প্রকাশের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় হেইজ-২০২২ জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদনের ট্যাবলেশন শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

জানা যায়, ২০১৬ সালের পর সরকার দেশে আর কোনো দারিদ্রতার হার প্রকাশ করেনি। তবে বাংলাদেশের দারিদ্রতার হার নিয়ে বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থা নানা ধরনের তথ্য প্রকাশ করে। যেমন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২৪ দশমিক ১ শতাংশ বা ৩ কোটি ৯২ লাখ মানুষ ‘বহুমাত্রিক’ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। এ ধরনের দারিদ্র্যের কারণেই মোট জনসংখ্যার ২৪.৩ শতাংশ মানুষ রয়েছেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। তবে, বহুমাত্রিক দারিদ্রতার হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য অর্জনের মাত্রা বেশ ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ‘দ্য ২০২১ গ্লোবাল মাল্টিডাইমেনশনাল পোভার্টি ইন্ডেক্স (এমপিআই)’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

অবশ্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচনের মাত্রা সমান নয়; ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান ব্যবহার করে বানানো এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহুমাত্রিক দারিদ্র্তার হার হ্রাসে পিছিয়ে রয়েছে সিলেট। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপে দেখা গেছে, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত যা ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ।

জরিপে যারা সাধারণত দারিদ্র্যসীমার ওপরেই বসবাস করেন, কিন্তু যেকোনো অভিঘাতে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারেন, তাদের নতুন দরিদ্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে তা ৪৪ শতাংশ। এ হিসাব থেকে জাতীয় পরিসরে নতুন দরিদ্রের এ হিসাব (১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ) প্রাক্কলন করা হয়েছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ১৯৭৩-৭৪ সালে হেইজ পরিচালনা করা হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে বিবিএস গুরুত্বপূর্ণ এ জরিপটি নিয়মিত বিরতিতে পরিচালনা করে আসছে। বিবিএস এ পর্যন্ত মোট ১৬ রাউন্ড হেইজ পরিচালনা করেছে। হেইজ কম্পিউটার অ্যাসোসিয়েটেড পার্সনাল ইন্টাভিউইং পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ জরিপের তথ্য উপাত্ত দারিদ্র্যা দূরীকরণ, উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ পরিবীক্ষণে ব্যবহত হবে।

এসআর/কেএ